এই সময়ে মার্কিন চাপ সামলানোর কূটনীতি

ডয়েচে ভেলে

মঙ্গলবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ০৭:৫৯ পিএম


কূটনীতি
ফাইল ছবি

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার সফরে আসছেন ৭ সেপ্টেম্বর। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আসছেন ১০ সেপ্টেম্বর। আর শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দিল্লিতে।

বিজ্ঞাপন

এই আসা যাওয়ার কেন্দ্রে রয়েছে ভারতে হতে যাওয়া জি-২০ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন না এলেও আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ আরো কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদীর বিশেষ আমন্ত্রণে ওই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রথম ঢাকা আসছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সের্গেই লাভরভ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের আস্থা ভাজন হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাশিয়ায় এই সময়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী লাভরভ ঢাকা সফর করেই ভারতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জি-২০ সম্মেলনে যোগদান শেষে ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসবেন। আর সম্মেলনের আগের দিন ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের নির্বাচনসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর এবং মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠককে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা।

ভারতে জি-২০ সম্মেলন ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর। ভারত এখন এর চেয়ার। অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো: আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইটালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, এই সময়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর এবং নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টও ঢাকা আসছেন। এটা বাংলাদেশকে গুরুত্বের জায়গায় নিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি মনে করেন সামনে নির্বাচন তাই এর রাজনৈতিক গুরুত্বও আছে। মার্কিন প্রতিনিধিরা তো বেশ কয়েকবার ঢাকা সফর করেছেন নির্বাচন ইস্যু নিয়ে। এখন অন্যরা করছেন। সামনে এই ধরনের সফর আরো বাড়বে।

তার কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনো রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ঢাকা আসছেন। আর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই সফরের গুরুত্ব আছে। তবে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে রাশিয়া তো তার অবস্থান আগেই জানিয়ে দিয়েছে। তারা এটাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসবে দেখছে। এটা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কোনো দেশের তৎপরতাকে তারা হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে। চীনও একই অবস্থানে আছে। রাশিয়া হয়তো সেই অবস্থানই আবার জানাবে।

তবে তিনি মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা, রাশিয়ান মুদ্রায় ওই দেশের সঙ্গে ব্যবসা করা, ডলারের প্রভাব কমানো, পরবর্তীতে ব্রিকস-এর সদস্যপদ পাওয়া এই বিষয়গুলো তার সফরে গুরুত্ব পেতে পারে।

নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারত এই সরকারকে গুরুত্ব দেয়। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ব্যাপারে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স দেখিয়েছে। ফলে ভারতের জন্য হাসিনার সরকার গুরুত্বপূর্ণ।

তার কথা, সামনের নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর মার্কিন চাপ আছে। সেটার একটা ব্যালেন্সও আছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো সাধারণ মানুষের চাপ। এখানে সরকারের পতন বা গণঅভ্যুত্থান লাখ লাখ মানুষ মাঠে না নামলে সম্ভব নয়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যারা সহযোগী আছে তার মধ্যে ফ্রান্সও আছে। এই সময়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরে কী হয় সেটাও দেখার আছে। জি-২০ সম্মেলনে জো বাইডেন আসছেন। আরো অনেক দেশের প্রতিনিধি থাকছেন। শেখ হাসিনা হয়তো বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাইডলাইনে কারো কারো সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবীর মনে করেন, মোদীর সাথে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথা হবে। সামনে নির্বাচন তাই এটা হওয়ারই কথা। নির্বাচনের পলিসি নিয়েও কথা হতে পারে। তবে জো বাইডেনের সঙ্গে কোনো বৈঠকের সম্ভাবনা দেখছি না। হয়তো দেখা হতে পারে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক ইস্যু আছে। সেগুলো তার অল্প সময়ের সফরে গুরুত্ব পাওয়ার কথা। আর রাশিয়ার তো বাংলাদেশ নিয়ে একটা রাজনৈতিক অবস্থান আছে। সেটা থাকবে।

তার কথা, এই সময়ে সরকার হয়তো চাইবে নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থানের প্রতি ভারত ও রাশিয়ার সমর্থন দেখানোর।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন মনে করেন, বর্তমান সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে মার্কিন চাপের মুখে আছে বলে সাম্প্রতিক এই কূটনৈতিক যোগাযোগ ও বৈঠক নিয়ে একটা শোঅফ হয়তো করবে সরকার। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোদীর সঙ্গে বৈঠক। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরেরও রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। আর রাশিয়ার অবস্থান স্পষ্ট। এখানে কেমন নির্বাচন হবে সেটা নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। আর ইউরোপ যে সব বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী হবে তা নয়। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। সেক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরও গুরুত্ব বহন করে। যুক্তরাষ্ট্র কী চায়? সুষ্ঠু নির্বাচন। এটাতো সবার চাওয়া।

তার কথা, বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু নির্বাচন। তাই মোদীর সাথে বৈঠকে নির্বাচন ইস্যু আসাই স্বাভাবিক। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চাইবেন তার অবস্থান তুলে ধরে ভারতের মনোভাব বুঝতে। আর তিস্তা ইস্যু নিয়ে কথা হলেও কোনো ফল আসবে না।

তিনি বলেন, জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মূল ফ্যাক্টর হলো যুক্তরাষ্ট্র আর ভারত। বাইডেনের সঙ্গে সাইড লাইনে আলোচনার সম্ভাবনা থকলে সেটা এরই মধ্যে জানা যেত। আর যারা রয়েছেন তাদের কারো সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাইড লাইনে কথা হতে পারে। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে বলে আমার মনে হয় না।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission