দেশ ও জনগণের স্বার্থের পক্ষে গণমাধ্যমকে দাঁড়াতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪ , ০৮:১০ পিএম


দেশ ও জনগণের স্বার্থের পক্ষে গণমাধ্যমকে দাঁড়াতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
ছবি : সংগৃহীত

দেশ ও জনগণের স্বার্থের পক্ষে গণমাধ্যমকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
 
বুধবার (২৯ মে) বিকালে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডের তথ্য ভবন মিলনায়তনে ‌‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক ২০২৩’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি  এ আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশটা আমাদের সবার। এদেশের স্বার্থের বিপক্ষে যেসব ষড়যন্ত্র হবে সেগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে একটা অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে, এ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে প্রচেষ্টা সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ সবাইকে সম্মিলিত ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার পূর্ণাঙ্গভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। কারণ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ। যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশ তৈরি হয়েছিল সে স্বপ্নের একটি বড় জায়গায় গণতন্ত্র, মানবাধিকারের সুরক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। এ বিষয়গুলো আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল '৭৫ এর ১৫ আগস্ট এ দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে। তারপর অন্ধকারের শক্তি এ দেশে ক্ষমতায় এসেছে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। সামরিক শাসন জারি করে, গণমাধ্যমের গলা টিপে, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হত্যা করে, মানবাধিকার বিনষ্ট করে, স্বাধীনতার স্বপ্নগুলোকে ভূলুঠিত করে এ দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সেই বাস্তবতা থেকে গত পনেরো বছরে অন্ধকার জায়গা থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে আলোর দিকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রেস কাউন্সিলকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরও শক্তিশালী করা, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের পরিবেশ আরো উন্নততর করা, আরো স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। 

বিজ্ঞাপন

মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত যারা আছেন তারা যাতে পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে পারেন, সে কারণে সরকার বিভিন্নভাবে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। গণমাধ্যম সব ধরণের স্বাধীনতা ভোগ করে সরকারের সমালোচনাও যদি করে সেগুলো বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার স্বাগত জানাতে চায়। সরকারের চোখ হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম। কোথাও কোন বিচ্যুতি-ব্যর্থতা থাকলে, সমস্যা থাকলে গণমাধ্যম সেটি নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সাথে তুলে ধরবে। এর মাধ্যমে সরকার মনে করে গণমাধ্যম সরকারের সহযোগিতাই করছে। 

তিনি আরো বলেন, সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে আমরা গণমাধ্যমকে দেখতে চাই। সরকারের বিচ্যুতি-ব্যর্থতা বা কোন সমস্যা সত্য তথ্যের ভিত্তিতে তুলে ধরলে সেগুলোকে সরকার স্বাগত জানাবে এবং স্বীকৃতি দিয়ে পুরস্কারও হাতে তুলে দেবে। এ সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার। যারা সমালোচক তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়। কাজেই সমালোচনা নেয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনা সরকারের যে সহনশীলতা বা তার যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটি প্রেস কাউন্সিল পদক প্রদানের মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, যখন বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা গণমাধ্যমের ঘাড়ে চেপে বসে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, বৈদেশিক বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হয়ে দেশ ও দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, অপতথ্য ও অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তখন সমস্যা তৈরি হয়। এগুলোকে সরকার সমালোচনা বলে না, সেগুলো হলো অপপ্রচার অপসংবাদিকতা, অপতথ্য, অন্যায় এবং ষড়যন্ত্র। অন্যায়, অপতথ্য ও অপপ্রচারের মাধ্যমে মানুষকে ধোকা দেয়া হলে, অপসংবাদিকতা হলে পেশাদার সাংবাদিকরা সেটা দমন করতে চায় সুষ্ঠু ও সুস্থ সাংবাদিকতার স্বার্থে। সরকার পেশাদার সাংবাদিকদের সাথে আছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জার্মানির ডয়চে ভেলে একটি তথ্যচিত্র বানিয়ে প্রচার করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে শান্তি রক্ষা মিশনে আমাদের যে সাফল্য ও সুনাম, সে সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য, আমাদের খাটো করে দেখানোর জন্য এক ধরণের দূরভিসন্ধিমূলক অপপ্রচারের একটি তথ্যচিত্র তারা তৈরি করেছে। এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে। কোনো দলের বিপক্ষে নয়, কোন ব্যক্তির বিপক্ষে নয়। যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে সুরক্ষা দেয়, যে প্রতিষ্ঠান গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছে, বাংলাদেশের সুনাম যারা বৃদ্ধি করেছে, সেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে খাটো করা মানে বাংলাদেশকে খাটো করা। একটা গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করে আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যম ব্যবহার করে এ ধরনের অপপ্রচার করছে। ডয়চে ভেলে বা যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংবাদ সংস্থা তারা যদি মানবাধিকারের প্রতি তাদের কোন সৎ অঙ্গীকার থেকে কোন প্রতিবেদন বা তথ্যচিত্র করে সেটাকে আমরা স্বাগত জানাবো। ডয়চে ভেলের যদি মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার থাকে, সততা থাকে তাহলে আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করতে চাই, আজকে বিশ্বে যে যুদ্ধের ডামাডোল, মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় যেভাবে নারী-শিশুকে হত্যা করে মানবাধিকার ভঙ্গের ন্যাক্কারজনক নজির তৈরি হচ্ছে, যেখানে গণহত্যা হচ্ছে, সেই গণহত্যা নিয়ে তারা একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে তুলে ধরুক। তাহলে আমরা বুঝবো তাদের মানবাধিকারের অঙ্গীকারে সততা আছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী কেরামত আলী এমপি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক ২০২৩ এর জুরি বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবুল মনসুর আহাম্মদ।

অনুষ্ঠানে ৬টি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক ২০২৩ প্রদান করা হয়। আজীবন সম্মাননা ক্যাটাগরিতে সাপ্তাহিক বেগম সম্পাদক মরহুম নুরজাহান বেগম, প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা ক্যাটাগরিতে দৈনিক ভোরের কাগজ, আঞ্চলিক প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা ক্যাটাগরিতে দৈনিক কক্সবাজার, উন্নয়ন সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক (বার্তা) মো. ইকবাল হোসেন,  গ্রামীণ সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে সময় টেলিভিশনের পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা সিকদার জাবীর হোসেন এবং নারী সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে দৈনিক ভোরের কাগজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ঝর্ণা মনিকে পদক প্রদান করা হয়।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission