শেষ হলো রক্তাক্ত জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি সম্বলিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১১:৩৮ পিএম


বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক আয়োজিত ‌‘ফ্রেমে বন্দি ৩৬ জুলাই : অভ্যুত্থানের পূর্বাপর’ শীর্ষক ফ্যাসিবাদবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সমাপ্তি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিন দিনব্যাপী চলা এই প্রদর্শনী সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হয়। এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই প্রদর্শনী শুরু হয়।

প্রদর্শনীটি জাতীয় জাদুঘরের হলে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৩৬ জুলাই আন্দোলনের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হয়ে ওঠে। এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে রক্তাক্ত জুলাই আন্দোলন ও শহীদদের আত্মত্যাগের গল্প, গণঅভ্যুত্থানের পরিণতি এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রদের সাহসী সংগ্রাম তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

জুলাইয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে মানুষের মাঝে জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট পুনরর্জ্জীবিত করতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক আয়োজিত ‘ফ্রেম বন্দি ৩৬ জুলাই : অভ্যুত্থানের পূর্বাপর’ শীর্ষক ফ্যাসিবাদবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী আজ সন্ধ্যা ৭টায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম সমাপনী ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।

তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রদর্শনীতে শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণ করেন এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আহত ব্যক্তিরাও তাদের গল্প শোনান। প্রথম দিন থেকে শুরু হয়ে দুই দিন ব্যাপী আয়োজনে দর্শকরা আন্দোলনের নানা মুহূর্তের ছবি দেখে পুনরায় সেই সময়ের আবেগ অনুভব করেন। দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রদর্শনীটি একদিন বাড়ানো হয়।

সমাপনী দিনে প্রদর্শনী দেখতে আসেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর, লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, রক্তগরম, মাথা ঠাণ্ডা— এমন সাহসী ও প্রেরণাদায়ক স্লোগান ধারণ করে যারা নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ময়দানে নেমেছিল, তাদের সে সাহসী সন্তানদের যারা আমাদের অগণিত মা- বাবার বুকের টুকরোদের গুলি করে হত্যা করেছে, যারা গণহত্যা সংঘটিত করেছে, সেই সমস্ত হায়েনাদের এই বাংলার মাটিতে বিচার হবে, বিচার হতেই হবে। সে যে মাপেরই হায়েনা হোক, পালিয়ে যাওয়া, লুকিয়ে থাকা কিংবা বন্দি থাকা হোক, সবারই বিচার হবে। এটা বর্তমান সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। 

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ইতিহাসকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। ইতিহাসকে সামনে আনতে হবে, যাতে ভবিষতে বীরের জন্ম হয় এদেশে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৫ আগস্ট যে বিজয় দেখেছে গোটা জাতি, দলমত নির্বিশেষে তা সবাইকে হৃদয়ে লালন করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রদর্শনীর তৃতীয় দিন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বক্তব্যে বলেন, দুই হাজার চব্বিশে বাংলাদেশের রক্তাক্ত জুলাই পৃথিবীজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। সাঈদ ও মুগ্ধসহ শতসহস্র প্রাণের বিনিময়ে জাতি পেয়েছে নতুন স্বাধীনতার স্বাদ। চার মাস পর সেই আন্দোলনের স্মৃতিকে নতুন করে প্রকাশ করা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।

তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার উদ্যোগ, আমি ছাত্রশিবিরকে আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই।

এই আয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিক আন্দোলন নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)- এর সহ- সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র জনাব রাশেদ প্রধান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমীর মো: সেলিম উদ্দিন নারায়নগঞ্জ মহানগর আমীর আব্দুল জব্বার, ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক,  হাফেজ রাশেদুল,  বাংলাদেশ ইনকিলাব পার্টির আহ্বায়ক আহম্মেদ শাকিলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা।

আরও উপস্থিত ছিলেন আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শামসুল আলম, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য নুর খান লিটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কমিটির আহ্বায়ক, বিশিষ্ট শিক্ষক ও লেখক এবাদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন মনামীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। 

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নানাদিক নিয়ে সাজানো প্রদর্শনী দেখত আরও আসেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসি‌কিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম, প্রসি‌কিউটর তা‌রেক আব্দুল্লাহ, প্রসি‌কিউটর এস এম মইনুল ক‌রিম, প্রসি‌কিউটর শাইখ মাহদী প্রমুখ।

এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, হাসিব আল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও সহ-সম্বয়কবৃন্দ, জাগপা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি খালেদ মাহমুদ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মোল্যা রহমাতুল্লাহ্ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সেক্রেটারি, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি)-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি কামরুল হাসান, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি কে এম ইমরান হুসাইন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের (নুর) ঢাবির নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন (ইরান)-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি আসিক আল আবিদ, Student of Sovereignty যুগ্ম আহবায়ক মুহাম্মদ ইরাকুব মজুমদারসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সমাপনী ঘোষণায় সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করি ‘ফ্রেমে বন্দি ৩৬ জুলাই: অভ্যুত্থানের পূর্বাপর’ প্রদর্শনীটি দেশবাসীকে ৩৬ জুলাই আন্দোলনের ত্যাগ ও আত্মত্যাগের ইতিহাস পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। আগামীতে এই অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরা যাতে সকল সময় সব ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি।

আরটিভি/এফএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission