• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

উৎসব ভাতাই হোক করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের নববর্ষের উপহার

সৈয়দ আশিক রহমান

  ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৪৬
দারিদ্রসীমা
সৈয়দ আশিক রহমান

বিশ্বে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাস। চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হয়ে এই আতঙ্ক এখন বিশ্বের সবগুলো দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়াঙ্গন সহ সব অঙ্গনেই স্থবিরতা নেমে এসেছে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি চীন, আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাস অর্থনীতিতে ধস নামিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র মতে, মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় প্রায় আড়াই কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে, শ্রেণি পরিবর্তন করে নেমে যাচ্ছে দারিদ্রসীমার নিচে। আর দারিদ্রসীমার নিচে আগে থেকেই যারা রয়েছেন, তাদের থাকতে হবে অনাহারে। করোনা এমন একটি বৈশ্বিক সমস্যা যে, প্রতিটি দেশই নিজেতের ভবিষ্যত সুরক্ষায় এবং জনগণকে বাঁচাতে ব্যস্ত। এমন বাস্তবতায় কোনো দেশই হয়তো অন্যদেশের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারবে না।

বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এর বহুমাত্রিক অভিঘাত। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, অতিপ্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান-পাটও রয়েছে বন্ধ। হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া কেউই ঘর থেকে বেরুচ্ছে না। এর ফলে কাজের সুযোগ ও আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মহাবিপদে পড়েছে “দিনান্তে পানতা ফুরায়” শ্রেণির মানুষ। ভালো নেই মধ্যবিত্ত শ্রেণিও। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তাঁর অন-লাইন কনফারেন্সে একাধিকবার মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রসঙ্গ এনেছেন। দেশের মধ্যবিত্তের চরিত্রটাই এমন যে “বুক ফাঁটে তবু মুখ ফুটে না”। তাই প্রধানমন্ত্রী খুব বিচক্ষণতার সঙ্গেই এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির যারা উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের তালিকা করে সরকারি সহায়তা ঘরে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

নিম্ন আয়ের মানুষদের সহযোগিতা করতে এরইমধ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব মানুষের দুবেলা খাবার নিশ্চিত করতে বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রি, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ; ‘বয়স্ক ভাতা’এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করার মতো পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনও খাদ্য বিতরণ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় ক্রিকেটাররা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা বেতনের অর্ধেক টাকা দান করার ঘোষণা দিয়েছে। ইন্টেল, মাইক্রোসফটসহ বিশ্বের অনেক কোম্পানিও বেতনের একটি অংশ দান করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় উদাহরণ তৈরি করেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। সোমবার মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজ্যপাল, সব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বেতনের ৩০ শতাংশ করোনা পরবর্তী সহযোগিতার জন্য কেটে নেয়া হবে। এজন্য দেশটির ১৯৫৪ সালের মন্ত্রী-সাংসদদের বেতন, ভাতা ও পেনশন আইনে পরিবর্তন আনার জন্য একটি অর্ডিন্যান্সে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এপ্রিল মাস থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হবে।

এমন উদাহরণ আমরা কতটা সৃষ্টি করতে পারবো জানি না। তবে কয়েকটি উদ্যোগতো নেয়াই যায়। করোনার এই মহা-দুর্যোগে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ি মেরামত খরচ, প্রতিদিনের তেল খরচ সহ যেসব বরাদ্দ দেয়া ছিল তা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের তহবিলে দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর বড় সুযোগ রয়েছে। পুরো দেশই এখন লকডাউনের মাঝে থাকায় সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান ও নানা প্রকল্পের কাজ প্রায় বন্ধ। কর্মকর্তাদের কোথাও যাতায়াতের তেমন সুযোগ না থাকায় সেই খরচের টাকা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দিয়ে সরকারের তহবিলকে আরও সমৃদ্ধ করা যায়।

বৈশ্বিক এই মহামারির কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে উৎসব ভাতাগুলোও সরকারের তহবিলে দেয়া যেতে পারে। বৈশাখের সব আয়োজনই বন্ধ। সারাদেশে করোনায় চাপা পড়েছে বৈশাখের আনন্দ। তাহলে কেন এই বৈশাখী ভাতা? এই উৎসব ভাতাই হোক করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নববর্ষের উপহার।

লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান

প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি

মন্তব্য করুন

daraz
  • নির্বাচিত কলাম এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
১১ এপ্রিল : ইতিহাসে আজকের এই দিনে
ব্রাজিলে বাণিজ্য মানে দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে ঢোকার সুযোগ
আরটিভিতে আজ যা দেখবেন
শিক্ষাসফরে আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ, পাওয়া যাবে সাড়ে ৫ লাখ টাকা
X
Fresh