• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

সামান্য মানসিকতা পরিবর্তনেই ফিরতে পারে কয়েক লাখ শ্রমিকের ভাগ্য ও অর্থনীতির চাকা

সৈয়দ আশিক রহমান

  ০৮ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৫৫
সামান্য মানসিকতা পরিবর্তনেই ফিরতে পারে কয়েক লাখ শ্রমিকের ভাগ্য ও অর্থনীতির চাকা
সৈয়দ আশিক রহমান

বাংলা নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে গত বছর পোশাক বিক্রি হয়েছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার। দেশের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতরে যেখানে বিক্রি হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। দেশীয় রঙ, কাপড় ও নকশায় মানুষের আগ্রহ বাড়ায় এই বাজারও এখন ধীরে ধীরে চলে আসছে প্রধান উৎসবের বাজারে পাশে।

কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় এবার ব্যবসায়ীদের এই বাজার পুরোপুরি হারাতে হয়েছে। এখন ঘরে বসে ব্যবসায়ীরা ঈদের বাজারও হারানোর ক্ষণ গণনা শুরু করেছেন। আর সেই সাথে ভারত পাকিস্তানি পোশাকের সাথে প্রতিযোগিতার দুঃস্বপ্নটাতো রয়েছেই। ঈদের পোশাকের বাজার ২৫ হাজার কোটি টাকা হলেও দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর ব্যবসা হয় মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার। বাকি টাকায় ভাগ বসায় ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও চীন।

বৈশাখী উৎসবে বিদেশি পোশাক যে দেশে আসে না তা কিন্তু নয়। ঐতিহ্যের প্রতি নতিস্বীকার, দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ বাঙালি বৈশাখী উৎসবে নিজের মনে বিদেশি নকশা ও কাপড়কে ঠাঁই দিতে চায় না বলেই এই উৎসবে বিদেশি পোশাক এখনও সুবিধা করতে পারছে না।

বৈশাখী উৎসবের পোশাকের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে দেশীয় সূতা ও কাপড়ে তৈরি নানা নকশার সমাহার। এর কাঁচামালসহ তৈরির উপকরণের ৮০ ভাগই দেশীয়।

গত কয়েক দশকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গড়ে উঠেছে ৫০ হাজারের বেশি ফ্যাশন হাউজ। বড় বড় উৎসবকে সামনে রেখে সেসব ফ্যাশন হাউজ দেশের ডিজাইনারদের তৈরি নতুন নতুন নকশার পোশাক নিয়ে আসে। কিন্তু অনেক ক্রেতার কাছে পোশাক বাছাইয়ে কাপড়ের মানের চেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয় হয় পোশাকের চাকচিক্য ও নকশা। ফলে তাদের কাছে অগ্রাধিকার পায় বিদেশি কাপড়ের পোশাক। তারা দেশীয় বুটিকের কাপড়কে বলেন 'সিম্পল' আর এসব বিদেশি পোশাককে বলেন 'গর্জিয়াস' । এই মানসিকতার পার্থক্যের কারণেই দেশের বুটিক শিল্প আজ হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ এই ক্রেতারাই কিন্তু বৈশাখে দেশীয় কাপড় ও নকশার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

দুটি উৎসবে একই ক্রেতা কেন একবার দেশীয় আরেকবার বিদেশি পোশাকের প্রতি আগ্রহ দেখায় সেসম্পর্কে দেশের স্বনামধন্য ফ্যাশন হাউজ বিশ্বরঙ এর সত্ত্বাধিকারী ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বিবিসিতে এক সাক্ষাতকারে জানান, আমরা রিসার্চমূলক কাজ করি। আমরা চাইলেই তো ইন্ডিয়ান নেটের কাপড় বানাবো না। স্যাটেলাইটের যুগে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই টিভি-সিনেমা দেখে চাইছে ভিনদেশী কাপড়ে সাজতে। এটা ব্রেইনওয়াশ হওয়ার মতো। অর্থাৎ মানসিকতা পরিবর্তন হলে সব ক্রেতাই দেশীয় পণ্যে আস্থা রাখতে পারে।

করোনা নামে বৈশ্বিক এই মহামারিতে দেশীয় ফ্যাশন হাউজের শ্রমিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তার চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক কারখানায়। যার সাথে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিক। করোনায় পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধারনা করাই যেতে পারে যে, আগামী অনেকগুলো সিজন এসব শ্রমিকদের হাতে কাজ থাকবে না।

বিজিএমইএ-র ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, করোনার কারণে এরইমধ্যে তিনশ' কোটির বেশি মার্কিন ডলার অর্থ মূল্যের অর্ডার বাতিল হয়েছে। যার ফলে সরাসরি ২১ লাখ ৭০ হাজার শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এই পরিস্থিতিতে যদি সব ধরনের বিদেশি পোশাক আমদানি বন্ধ করে দেশের অভ্যন্তরীণ পোশাক তৈরিতে কারখানাকে যুক্ত করা যায় তাহলে এই কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকের সংখ্যা কিছুটা নিশ্চই কমে আসবে। সেক্ষেত্রে দেশের ক্রেতাদের মানসিকতা পরিবর্তনটাই হতে হবে প্রথম।

তবে এক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বর্ডার উন্মুক্ত থাকলে ও সহনশীল কর থাকলে বিদেশি পোশাক আমদানি বন্ধ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে বর্ডারের প্রতি যেমন কড়াকড়ি বাড়াতে হবে তেমনি বিদেশি পোশাকের ওপর নতুন কর কয়েকশ গুণ কর বাড়িয়ে দিতে হবে।

দেশের অর্থনীতি সচল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়া ও সার্বিক অর্থনৈতিক কার্মকাণ্ড সচল রাখতে যেসব বিলাসী পণ্য আমদানি হয় তার ওপরও সর্বোচ্চ কর আরোপ করা এখন সময়ের দাবি। যদি বিলাসী পণ্যগুলোর ওপর কয়েশগুণ, প্রকারভেদে হাজারগুণ কর আরোপ করা যায় তাহলে এসব পণ্যের পেছনে যে টাকা বাইরে চলে যেতো তা ঘরে থেকে দেশের দুঃসময়ে অর্থনীতি মেরামত ও সরকারের উন্নয়ণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান

প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি

মন্তব্য করুন

daraz
  • নির্বাচিত কলাম এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার পরও কমেছে দাম
বিদেশি কোনো প্রভুর ইন্ধনে ভারত বিরোধিতা করছে বিএনপি : শেখ পরশ
নববর্ষ উদযাপনে মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ
বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত : প্রধানমন্ত্রী
X
Fresh