১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস ধরে বধ্যভূমিতে গণহত্যা, লুটসহ ঝালকাঠিতে চলে পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ হয়নি। একাত্তরের স্মৃতি আর শোকগাথা এসব বধ্যভূমিগুলো কালের গর্ভে হারাতে বসেছে।
একাত্তরের ৭ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানী সেনারা শহর ছেড়ে পালিয়ে গেলে বিনা বাঁধায় ঝালকাঠি হানাদার মুক্ত হয়। ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঝালকাঠি ও নলছিটি থানা দুটি মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয়। রাতের মধ্যেই পুরো জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু একাত্তরের নয় মাস ঝালকাঠির বিভিন্ন স্থানে বধ্যভূমিতে গণহত্যা, লুট আর নারী নির্যাতনসহ হানাদার বাহিনী নির্মম নির্যাতন চালায়।
ঝালকাঠি জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি শহরের সুগন্ধা নদী পাড়ে বর্তমান পৌর খেয়াঘাট এলাকায়। ১৯৭১ সালের ৩০ মে একদিনেই এখানে ১০৮ জন নিরীহ বাঙ্গালী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জেলার বেশাইন খান গ্রামে ৭ জুন হানাদাররা মসজিদ থেকে নামাজ পড়া অবস্থায় ধরে এনে সেখানকার বধ্যভূমিতে হত্যা করে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিজনকে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২৪টি বধ্যভূমির তালিকার কথা জানা গেছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে এর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কিন্তু আত্মত্যাগী এই সব শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ হয়নি। বধ্যভূমিগুলোর কোথাও সরকারি উদ্যোগে একটিও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হয়নি। জেলার সবচেয়ে বড় পৌর খেয়াঘাট এলাকায় একাত্তরের বধ্যভূমিতে নির্মিত হয়েছে পৌর কশাইখানা। আর সারা দেশের সাথে ঝালকাঠি জেলায় নির্মিত জেলা শহীদ স্মৃতি ফলকটিতে নির্মাণের ৬ মাসের মধ্যেই ফলক থেকে মুছে গেছে শহীদের নাম।
মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা বলেন, পাক সেনারা ঝালকাঠির বিভিন্ন স্থানে শতশত মানুষকে হত্যা করেছে। কিন্তু সেই বধ্যভূমিতে এখনো কোনো শহীদের স্মৃতি রক্ষা করা হয়নি। আমাদের সরকারের কাছে দাবি বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করে শহীদের স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করবেন যাতে আগামী প্রজন্ম এ স্মৃতি দেখতে পারে।
সাংবাদিক মানিক রায় বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝালকাঠির পৌর খেয়াঘাট নদীর পাড়ে পাকিস্তানি সেনারা মানুষ ধরে এনে প্রতিদিন সকালে গুলি করে হত্যা করত। এখানে প্রায় ১৯৬ জনকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ না করায় অনেকগুলো স্থান স্মৃতির গর্ভে হারিয়ে গেছে। কোনো কোনোটি দখলও হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছে, বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতি সৌধ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। অতি দ্রুত সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে ঝালকাঠির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ এবং সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। সংরক্ষণ করা হবে এ জেলার মুক্তিযুদ্ধের শোকবহ আর গর্বে গাঁথা ইতিহাস। আর এজন্য সরকার এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এগিয়ে আসবে। দীর্ঘ দিনের এ প্রত্যাশা ঝালকাঠিবাসীর।
এসআর/