দীর্ঘ চার মাস ১২ দিনের মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মধ্যরাত থেকে মাছ আহরণ শুরু হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আশা করছে, এ বছর আশানুরূপ মাছ শিকার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘ ১৩২ দিনের অপেক্ষার অবসান হওয়ায় স্বস্তি জেলেদের। তাই জেলে পল্লীগুলোতে চলছে মাছ ধরার প্রস্তুতি। কিন্তু এ বছর কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় দুই দফা বাড়ানো হয় নিষেধাজ্ঞা, যা শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে।
জানা গেছে, ৭২৫ বর্গকিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করা, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। তবে এবার হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ১ মে’র পরিবর্তে আরও এগিয়ে এনে ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত তিন মাসের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যেও কাপ্তাই হ্রদে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ পানি না থাকায় দুই দফায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হচ্ছে হ্রদে মৎস্য আহরণ।
বিএফডিসির সূত্র অনুযায়ী, হ্রদে ১০৫ এমএসএল (মিনস সী লেভেল) পানি থাকলেই অবমুক্ত করা পোনা বেড়ে উঠতে ও মা মাছগুলো প্রাকৃতিক প্রজননের পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। তবে এবার কাপ্তাই হ্রদে কম বৃষ্টিপাত ও ভারতের মিজোরাম থেকে পানি না আসায় হ্রদের পানি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। স্বাভাবিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং বর্ষার শেষ মুহূর্তে বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও অবমুক্ত করা পোনা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। এই কারণে হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছগুলো বেড়ে ওঠার যথেষ্ট পানি না পাওয়ায় জেলা প্রশাসন কাপ্তাই হ্রদে আরও দুই মেয়াদে ১ মাস ১২ দিন মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায়।
জেলে মতিলাল দাস বলেন, তিন মাসের জায়গায় প্রায় সাড়ে চার মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে, আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি হ্রদে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য। আশা করছি এবার আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাবে।
রাঙামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া জানান, এবার প্রায় সাড়ে চার মাস হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল। তাই আশা করছি, এবার মাছের আহরণ ভালো হবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশ (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণিকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, আমাদের প্রস্তুতি সেরে নেওয়া হয়েছে। পল্টুন মেরামত, মাছের অবতরণ ঘাটগুলো পুনঃসংস্কারসহ নানান কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যেহেতু এবার দীর্ঘ সময় হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল, আশা করছি ভালো পরিমাণ মাছ আহরণ হবে। এতে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।