পা দিয়ে লিখে দৃষ্টান্ত গড়তে চায় এসএসসি পরীক্ষার্থী সিয়াম
জন্ম নিয়েছেন দুই হাত ছাড়া। পরিবারেরও নেই লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য। তবে হাত না থাকলেও তার রয়েছে আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছাশক্তি। সব সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে পা দিয়ে লিখে অংশ নিয়েছেন এবারের এসএসসি পরীক্ষায়। বলছি জামালপুরের সরিষাবাড়ির চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থী সিয়াম মিয়ার কথা।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে সিয়াম। সে জিন্নাহ মিয়া ও জোসনা বেগমের ছোট ছেলে। লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে ২০১৪ সালে উদনাপাড়া ব্র্যাক স্কুলে ভর্তি করে। দিনমজুর বাবার পক্ষে তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচ বহন করা সম্ভব হয়নি। ফলে চতুর্থ শ্রেণিতে থাকতে একবার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার। এক বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকে তার। তবু থেমে যায়নি সিয়াম, আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে সিয়াম। এক শিক্ষকের প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সিয়াম। এরপর চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০০৬ সালে জন্ম নেওয়া সিয়াম মিয়া পিএসসি পরীক্ষাতেও পা দিয়ে লিখে পেয়েছিল জিপিএ ৪.৮৩।
সিয়ামের ভাষ্য, সবাই বলতো আমি কখনো পড়াশোনা করতে পারবো না। এখনো অনেকে এ কথা বলেন। আমি লেখাপড়া করে সবাইকে দেখাতে চাই, আমি ও লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষিত হতে পারি।
মা জোছনা বেগম বলেন, অনেক কষ্টে সিয়াম স্কুলে যায়। মাঝে মাঝে তার ঘাড়ে ও পায়ে ব্যথা হয়। তবুও হাল ছাড়ে না। তবে ওর সহপাঠীরা ব্যাগ ওঠানো-নামানোসহ নানান বিষয়ে সহযোগিতা করে। আমার স্বামী দু’বার স্ট্রোক করেছে। কোন কাজ করতে পারে না। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে সিয়ামের পড়াশোনা করাচ্ছি।
সিয়ামের বাবাও নিজের অপরাগতা এবং সিয়ামের ইচ্ছাশক্তির বিষয়ে জানান।
চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সিয়াম পা দিয়ে লিখলেও তা খুব সুন্দর। যা দেখে সবাই বিস্মিত হন। তার পরিবারের অবস্থা ভালো না। বিদ্যালয় থেকে তার বেতন পোশাক ও এসএসসির ফরম ফিলআপ ফি মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমারের আওতাধীন একটি সেন্টারে সিয়াম নামের এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। সে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্র থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তাকে ৩০ মিনিট সময় বেশি দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন