উপজেলা নির্বাচন : মন্ত্রীর ভাইয়ের হুমকিতে তোলপাড়
মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর বড় ভাই ও মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল হোসেনের হুমকিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এক প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে দলেরই আরেক প্রার্থীর এজেন্ট থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। ভোটকেন্দ্রে ওই প্রার্থীর কোনো এজেন্ট থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। জনপ্রশাসনমন্ত্রী কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নিলেও তার ভাইয়ের এ বক্তব্য মন্ত্রীকে বিব্রত করেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
নেটিজেনদের মাধ্যমে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের একটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখছেন ইকবাল হোসেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং আওয়ামী লীগ নেতা আনারুল ইসলাম সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী।
তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইকবাল হোসেন বলেন, ৮ তারিখের নির্বাচনে শুধুমাত্র আনারুল ইসলামের (মোটরসাইকেল প্রতীক) ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট থাকতে পারবে না। এই আশরাফপুর গ্রামে কোনো এজেন্ট থাকবে না। শুধু আনারুল ভাইয়ের মার্কায় সিল মারা হবে। আর কোনো মার্কায় সিল মারতে দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যা ৬টায় সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের আশরাফপুর গ্রামের ৭নং ওয়ার্ড স্কুলপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এক সভার আয়োজন করে। এতে ইকবাল হোসেন তার ২ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
নির্বাচনী সভায় ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘আনারুল ভাইসহ আরও চারজন প্রার্থী আছেন। আনারুল ভাই যদি নির্বাচনে না দাঁড়াতো তাহলে আমি ভোট করতে আসতাম না। আনারুল ভাই একজন যোগ্য প্রার্থী। উপজেলা চেয়ারম্যান এমন একজনকে করতে হবে, যে টোটাল উপজেলা আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন। যে ব্যক্তি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে পারবে, যে নিজের জমি বেচে আওয়ামী লীগকে টিকাতে পারবে সেই ধরনের লোক আমরা উপজেলাতে চাই। আনারুল ভাই ছাড়া এই ধরনের কোনো লোক নেই। আর কোনো প্রার্থী নেই। তাই আজকে সেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মতো ওই রকম ভোট চাই আনারুল ভাইয়ের জন্য। একচেটিয়া ভোট হবে শুধু মোটরসাইকেলে। প্রত্যেকটি সেন্টারে মোটরসাইকেল জিতবে। আমরা শহরের লোকজন বুঝেছি যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। আনারুল ভাইকে আমরা প্রতিটি সেন্টারে ব্যাপক ভোটে বিজয়ী করবো। এই আশরাফপুর গ্রামে কোনো এজেন্ট থাকবে না। শুধু আনারুল ভাইয়ের মার্কা মোটরসাইকেল মার্কায় সিল মারতে হবে। অন্য কোনো মার্কায় সিল মারতে দেওয়া হবে না।’
এ দিকে ইকবাল হোসেনের এ বক্তব্য নেটিজেনদের কাছে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। তিনি জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনের বড় ভাই। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চারজন প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের গ্রুপ রাজনীতির হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর পক্ষের প্রার্থী হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম শাহীন ও আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনারুল ইসলাম। এ ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মান্নান এবং জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি হাসেম আলী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানান, জনপ্রশাসনমন্ত্রীর পক্ষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম শাহীন ও আনারুল ইসলামের মধ্য থেকে একজনকে সমর্থন দেওয়ার দাবি ছিল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। কোনো প্রার্থীর পক্ষে মন্ত্রী, এমপি ও তাদের স্বজনরা অবস্থান না নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কঠোরতা থাকায় জনপ্রশাসনমন্ত্রী নীরবতা পালন করেছেন। এরমধ্যে তার আপন ভাইয়ের এমন বক্তব্য মন্ত্রীকে বিব্রত করেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
ইকবাল হোসেনের বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম শাহীন বলেন, এভাবে প্রকাশ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর ভাই ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি যদি বক্তব্য দেন তাহলে উপজেলা নির্বাচন জনগণের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এগুলো নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আকারে অভিযোগ জানানো হবে।
জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন বলেন, আমদহ এলাকায় সাবেক চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম ওই এলাকায় খুব জনপ্রিয় নেতা। আমি এ কারণে অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যাবে না বলে কথা বলতে গিয়ে এমন কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। বিষয়টি ওইভাবে মনে করার কিছু নেই।
তবে লিখিত অভিযোগ কিংবা ভিডিও ক্লিপ হাতে না আসা পর্যন্ত কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি এ নির্বাচনের রির্টার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা নির্বাচন অফিসার ওয়ালিউল্লাহ।
মন্তব্য করুন