নামাজ পড়ে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ আল আমিন, ভয়ে মরদেহ ধরেনি কেউ

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪ , ০৯:৩৭ এএম


নামাজ পড়ে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ আল আমিন, ভয়ে মরদেহ ধরেনি কেউ
সংগৃহীত ছবি

অনেকক্ষণ রাস্তায় পড়ে ছিল আমার ছেলেটা, কেউ ভয়ে ধরতে পারেনি। আমি বাসা থেকে বের হতে হতে আরেকটা কল আসে, হাসপাতাল থেকে অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন করে বলছিল, খালাম্মা আল আমিন মারা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩১ জুলাই) এভাবেই নিজের ছেলে হারানোর কথা বলছিলেন আর আর্তনাদ করছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় গুলিতে নিহত সাইমন ইসলাম আল আমিনের (২৩) মা মনোয়ারা বেগম।

তিনি বলেন, ‘মসজিদ আমাদের বাসা থেকে সামান্য দূরে। ছেলেটা রাস্তা পার হয়ে জুমার নামাজ পড়তে যায়। কিছুক্ষণ পর বাসা থেকে গুলির শব্দ পাই। এরপর একজন কল দিয়ে বলল, আল আমিন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অনেকক্ষণ রাস্তায় পড়েছিল আমার ছেলেটা, কেউ ভয়ে ধরতে পারেনি। আমি বাসা থেকে বের হতে হতে আরেকটা কল আসে, হাসপাতাল থেকে করা অচেনা একটা নাম্বার বলছিল, খালাম্মা আল আমিন মারা গেছে। এ সময় চারদিকে আর্তনাদের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি দৌড়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি পাখিটার রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে।’

বিজ্ঞাপন

আল আমিনের মা বলেন, ‘আমার পাখিকে ২৩ বছর না খেয়ে না পড়ে বাঁচিয়ে রেখেছি। টাকা পয়সার জন্য বাবুটারে পড়াশোনা করাতে পারিনি। জুলাই মাসের দুই তারিখে কাজে যোগ দেয়, প্রথম বেতন পাওয়ার আগেই মারা গেল ছেলেটা। ইচ্ছে ছিল বড় ভাইয়ের প্রবাসে যাওয়ার ঋণ শেষ করে আবার পড়াশোনা করবে। ভালো চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ধরবে। গত ৫ মাস আগে বিয়ে করেছে। বউটাকে তুলে আনতেও পারেনি। এর আগেই আমার ছেলেটাকে খুন করে দিল তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি বিজিবির গুলিতে মারা গেছে আমার ছেলে। তার পিঠে গুলি লেগে নাভির ওপর দিয়ে বের হয়ে গেছে। রাতে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে শনিবার ভোরে কুমিল্লার লাকসাম থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স গিয়ে তার লাশ আনে।’

জানা গেছে, নিহত আল আমিন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর মধ্যপাড়ার মো. বাবুল ও মনোয়ারা বেগমের মেজো ছেলে। তিনি সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ওই এলাকার একটি ফ্যাক্টরিতে নতুন কাজ পেয়েছিলেন। তার বাবা গাজীপুরে কাজ করতেন। গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে বাসার ফেরার সময় রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ সময় অনেক্ষণ রাস্তায় পড়ে ছিল তার নিথর দেহ, কেউ ভয়ে ধরতে পারেনি। অনেকক্ষণ পরে কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন ২০ জুলাই শনিবার কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে।

বিজ্ঞাপন

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও নু এমং মারমা মং বলেন, ‘নিহতের মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরিবারটিকে সহায়তা করা হবে।’

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission