এখন ওষুধ কে কিনে দেবে, ছেলের ছবি নিয়ে মায়ের আহাজারি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪ , ০৪:৫৭ পিএম


এখন ওষুধ কে কিনে দেবে, ছেলের ছবি নিয়ে মায়ের আহাজারি
ছবি : আরটিভি

ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ২১ জুলাই নিহত হন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (ওসি) মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া। এ ঘটনায় তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের কালান্দরে চলছে মাতম।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

এ সময় এলাকাবাসী জানায়, পুলিশ পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া ছিলেন পরোপকারী মানুষ। কেউ সমস্যায় পড়ে এলাকার নাম বলে কল দিলেই তিনি সমাধান করে দিতেন। এ কারণে তার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী।

বিজ্ঞাপন

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের কালান্দর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও গুলজান বেগমের আট ছেলে-মেয়ের মধ্যে মাসুদ ষষ্ঠ সন্তান। ১৯৯৬ সালে তিনি উপপরিদর্শক হিসাবে পুলিশে যোগদান করেন। অনেকদিন ধরে তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে ঢাকার রামপুরা বনশ্রী এলাকায় বসবাস করতেন। তার বড় মেয়ে উম্মে মাইশা স্নেহা ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। মেঝ মেয়ে উম্মে মাহিরা নেহা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। সবার ছোট আহনাফ মাহিন ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।    

মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা নির্বাক পরিবারের সদস্যরা। এ সময় ঘরে ঢুকে দেখা যায় নিহত এই পুলিশ কর্মকর্তার শতবর্ষী বয়সী মা গুলজান বেগম খাটে শুয়ে ছেলের ফ্রেম বাঁধানো একটি ছবি নিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। বয়সের ভারে কিডনি, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় আক্রান্ত এই মায়ের আহাজারি কোনোভাবেই থামছে না। তাকে শান্তনা দেওয়া ভাষা নেই কারও। বার বার তিনি আহাজারি করে বলছেন, তোমরা আমার কলিজার টুকরো ছেলেকে এনে দাও; আমার ছেলে নেই এখন কে আমাকে ওষুধ কিনে দেবে? আমার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

নিহত মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার ছোট ভাই সোহেল ভূঁইয়া বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়দায়িত্ব ছিল ভাইয়ের ওপর। আমাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন তিন বেলা খাবারের আগে মায়ের খবর নিত। মাস শেষ হওয়ার আগেই মায়ের ওষুধ কিনে পাঠিয়ে দিত। প্রতিমাসে মাকে একবার ডাক্তার দেখাত। তিনি আরও বলেন, ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ কর্মরত থাকলেও ঢাকার বাসা থেকে গিয়ে অফিস করতে। ঘটনার দিন বাসা থেকে চা খেতে সন্ধ্যার পর বের হন তিনি। পরে অপরিচিত নাম্বার থেকে বাসায় কল দিয়ে জানানো হয় ভাইকে কুপিয়ে রাস্তার মধ্যে ফেলা রাখা হয়েছে। তাকে এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে যে মানুষ মানুষকে এভাবে কখনও মারতে পারে না। আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই।

বিজ্ঞাপন

নিহতের স্ত্রী মেরিনা আক্তার বীনা বলেন, গত রোববার দুপুরে তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী হত্যার বিচারের পাশাপাশি সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। কোনো সহযোগিতা না পেলে তিন সন্তানকে নিয়ে চলা খুব কষ্ট হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, গত ১৯ জুলাই মাসুদকে বাসা থেকে বের হতে না করেছিলাম। কিন্তু সে সবাইকে সতর্ক করে নিজেই বের হয়ে মৃত্যু ডেকে আনল। তার সমস্ত শরীরে শুধু আঘাতের চিহ্ন। ধারালো অস্ত্র ও রড দিয়ে মাথায় শরীরে আঘাত করা হয়। পরে স্থানীয় এক নারী রাস্তা থেকে মাসুদকে নিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২১ জুলাই সকালে মারা যান তিনি। পরে ওইদিন রাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission