• ঢাকা শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১
logo

নানান প্রতিকূলতার মাঝেও টিকে আছে নড়াইলের মৃৎশিল্প

নড়াইল প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:০৮
ছবি : আরটিভি

প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামসহ আধুনিক জিনিসপত্রের দৌরাত্ম্যে সারাদেশে কুমারশিল্প বিলীন হতে চললেও নড়াইল সদরের চন্ডিতলা ও লোহাগড়া উপজেলার কুমারডাঙ্গা গ্রামের চিত্র এখনও ব্যতিক্রম। এই দুটি গ্রামসহ জেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক কারখানায় এখনও মাটির তৈরি হরেক রকমের জিনিসপত্র বানিয়ে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ।

মৌসুম শুরু হওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে কুমার পাড়াগুলোতে। এসব এলাকায় পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন পরিবারের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। ভোর থেকে শুরু হয়ে কাজ চলছে রাত পর্যন্ত। তবে আধুনিকতার আগ্রাসনে এখন এ কাজে তেমন একটা লাভ নেই। পেটের দায়ে এবং বাবা-ঠাকুরদার দীর্ঘদিনের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনও এ কাজকে আঁকড়ে ধরে আছে তারা। এখানকার কুমারদের তৈরি মাটির পাত্র সরবরাহ হচ্ছে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল ও ঝালকাঠিসহ বেশ কয়েকটি জেলায়।

নড়াইল সদরের ভদ্রবিলা ইউনিয়নের চিত্রা নদীর পাড়ে চন্ডিতলা গ্রামটির কুমারদের ইতিহাস শত বছরের। এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই গ্রামের অর্থনীতি মানে মৃৎশিল্প। বংশ পরম্পরায় এ জনপদের বেশির ভাগ পরিবার এখনও বাবা ঠাকুরদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। জেলার চন্ডিতলা, কুমারডাঙ্গা, চন্ডিতলা, রতডাঙ্গা, রায়গ্রাম, ছোট কালিয়াসহ জেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক কারখানায় বিরামহীনভাবে চলছে কুমারের চাকা। তৈরি হচ্ছে মাটির তৈরি বিভিন্ন রকমের জিনিস। এসব গ্রামে মাটির তৈরি জিনিস পত্র বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ। বাড়িতে বাড়িতে দিনরাত ঘুরছে কুমারের চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা নরম করছে, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শুকানোর কাজ করছে, কেউবা আবার ব্যস্ত এসব পোড়ানোর কাজে। আবার অনেকের মনোযোগ পোড়ানো জিনিসপত্রে রং-তুলির কাজে।

এখানকার কুমারদের সুনিপুণ হাতে তৈরি মাটির জিনিস-পত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এখনও। এ জনপদের কুমার পাড়াগুলোতে তৈরি করা হচ্ছে রান্নাঘরের হাড়ি, কড়াই, বদনা, ঢাকুন, ফুলের টব, কলসি, ঠিলে, পিঠার ছাঁচ, দই হাড়ি, মুড়ি ভাজার সামগ্রীসহ অন্তত ৩০ রকমের গৃহস্থলি জিনিসপত্র।

সদর উপজেলার চন্ডীতলার এলাকার তীর্থ পাল ও রবিন পালসহ কয়েকজন বলেন, আগে আমাদের এখানে ৪০ থেকে ৫০টি ঘর এই কাজ করত। এখন ১৫ থেকে ২০ ঘর করে। প্রত্যেক এলাকায় এ রকম কমে গেছে। দিনে ৫০ থেকে ৬০টি হাঁড়ি বানাতে পারলে মজুরি হয়তো পড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। সিরামিক, প্লাস্টিক, স্টিলের কারণে আগের চেয়ে মাটির পণ্যের চাহিদা কম, যা আয় হয় তা দিয়ে চলে না। এ জন্য কাজ করা পালের সংখ্যাও কমে গেছে। এ ছাড়া আগে মাটি কেনা লাগত না। এমনি পাওয়া যেত। এখন একেক ট্রাক মাটি কিনতে হয় ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা দিয়ে।

কালিপদ পাল বলেন, বাবা-ঠাকুরদা এই কাজ করতেন। আমরাও ছোটবেলায় শিখেছি। ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে এ কাজ করতেছি। বয়স হয়ে গেছে, আগে বেশি কাজ করতে পারতাম, এখন অল্প করি। আর আমাদের ছেলেপুলেরা এ কাজ করতে চায় না। তারা অন্য কাজে ঝুঁকছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের (বিসিক) নড়াইল জেলায় দায়িত্বরত উপব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন বলেন, বছরের ৯ মাস এই কাজ করেন কারিগর ও শ্রমিকরা। খরা মৌসুমে কুমারদের কাজের চাপ বেশি থাকে। আর এই পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকার মাটির তৈরি জিনিসপত্র বেচাকেনা হয় এ জেলায়।

আরটিভি/এএএ-টি

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নড়াইলে খালেদা জিয়ার নামে মানহানির মামলা খারিজ
নড়াইলে বস্তা পদ্ধতির আদাচাষে সফলতা পাচ্ছেন কৃষক
নড়াইলে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা 
নড়াইলে সৎমায়ের হাতে ৪ বছরের শিশু খুন