মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস আজ
আজ ১১ ডিসেম্বর, কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ৬০ হাজার মানুষের নির্মম হত্যা আর দুই হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এদিনে মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার কুষ্টিয়া জেলা শত্রু হানাদার মুক্ত হয়। চুড়ান্ত বিজয়ের ৫ দিন আগেই জনগণ এদিন বিজয় নিশানা দেখতে পেয়েছিল। স্বজনের গলিত মৃতদেহ, কঙ্কাল, গণকবর, সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের আর্তনাদ আর বিজয়ের আনন্দে রাস্তায় নেমে মানুষের উল্লাস মিলেমিশে একাকার হয়েছিল।
মূলত কুষ্টিয়া ছিল মুক্তিযুদ্ধের অস্থায়ী রাজধানী। তাই পাক হানাদাররা কুষ্টিয়ার ওপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাক হানাদার বাহিনীও কুষ্টিয়ায় চরম প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ৩০ মার্চ ভোররাতে মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে পাক হানাদার ক্যাম্পে হামলা করে। সারাদিন চলা যুদ্ধে নিহত হয় অসংখ্য পাক সেনা। শেষ পর্যন্ত ১ এপ্রিল রাতের আধারে পাক বাহিনী কুষ্টিয়া ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রথমবারের মত শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া।
১০ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়ার অন্তর্গত মুজিব নগরে সরকার গঠন হয়। এরপর থেকে দফায় দফায় প্রচণ্ড বিমান হামলায় ১৬ দিন পর আবারও কুষ্টিয়া দখলে নেয় পাক বাহিনী। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস জুড়েই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় হানাদার পাকবাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর তুমুল লড়াই চলেছে।
শুধুমাত্র কুষ্টিয়া জেলায় মুক্তিযুদ্ধকালে পাক হানাদাররা ৬০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা আর দুহাজার মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করে।
৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর তিন দিক থেকে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণে একের পর এক বৃহত্তর কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা হানাদার মুক্ত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১০ ডিসেম্বর রাতে পাকবাহিনী পালিয়ে ভেড়ামারা-পাকশী ঘাট হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়া ত্যাগ করে। ১১ ডিসেম্বর পুরোপুরি মুক্ত হয় কুষ্টিয়া। কিছু স্মৃতিচিহ্ন এখনও তার সাক্ষী হয়ে আছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ১১ তারিখ সকালে কুষ্টিয়া শহরে ঢুকে আমরা বিধ্বস্ত পরিবেশ দেখতে পাই। যা বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। একদিকে পড়ে থাকা লাশের পচা গন্ধ, ঘরবাড়ি পোড়ানোর গন্ধ। অনেক বাবা মায়ের ছেলে হারানোর আহাজারি, কেউ কেউ তো জানেই না তার ছেলে মারা গেছে। তাদের আহাজারি দেখার মত না। এর ভেতরেও বিজয়ের আনন্দ। সকালে কুষ্টিয়া ডিসিকোর্ট চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তোলা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা শামীম রেজা শহরে চৌড়হাসের ব্রিজের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে বলেন, এখনও সেদিনের কথা মনে হলে ভয়ে আতকে ওঠে প্রাণ। ১১ তারিখে আমরা এই শহরের যেখানে সেখানে লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। মানুষের ঘরবাড়ি না থাকলেও তা পোড়ানোর গন্ধ রয়ে গেছে। রাস্তা ঘাট কোন কিছু ঠিক ছিলো না।
মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল আলম টুকু বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতি চিহ্ন সংরক্ষণ করা দরকার।
আরটিভি/এএএ
মন্তব্য করুন