ঢাকাসোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

৩ বছর পর বিদ্যুৎ পাচ্ছেন শাল্লার পাঁচ গ্রামের মানুষ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ , ১০:১০ পিএম


loading/img

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের শাল্লা উপজেলার শ্বাসখাই গ্রাম, শ্বাসখাই বাজার, দত্তপাড়া, মৌরাপুর ও আগোয়াই গ্রামে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় বিশেষ এ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। নিয়মিত বিল পরিশোধ না করায় প্রায় ১০ লাখ বকেয়া পড়েছিল। সর্বশেষ গত তিন বছর ধরে ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে পড়েছিল। এরপর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল ওই পাঁচ গ্রামের ৫০০ পরিবারের অন্তত ৪ হাজার মানুষ। 

বিজ্ঞাপন

তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনিরের প্রচেষ্টায় অবশেষে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবার স্বপ্ন দেখছেন সেই পাঁচ গ্রামের মানুষ। সেজন্য রোববার প্রায় ১০ লাখ টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে অন্ধকারে থাকার পর এবার ওই পাঁচ গ্রামের মানুষের মাঝে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশার সঞ্চার হয়েছে। 

জানা যায়, শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের শ্বাসখাই গ্রাম, শ্বাসখাই বাজার, দত্তপাড়া, মৌরাপুর ও আগোয়াই গ্রামে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে দুর্গম হাওর এলাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর এই সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যেই মুখ খুবড়ে পড়ে প্রকল্পটি। এরপর ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় প্রকল্পের বিদ্যুৎ সরবরাহের খুঁটিসহ অনেক কিছুই ভেসে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ওই প্রকল্প আর মানুষের কোন কাজে লাগেনি। বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়লে শ্বাসখাই গ্রাম, শ্বাসখাই বাজার, দত্তপাড়া, মৌরাপুর ও আগোয়াই গ্রামে অন্ধকার নেমে আসে। বেকায়দায় পড়েন ওই পাঁচ গ্রামের ৫০০ পরিবারের ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। 

বিজ্ঞাপন

ওই পাঁচ গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, তাদের অনেকে সৌরবিদ্যুৎ ছেড়ে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেতে যোগাযোগ করেন। কিন্তু বিল বকেয়া থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষও তাদের ফিরিয়ে দেয়। এরপর ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর চার শতাধিক স্বাক্ষরসহ জেলা প্রশাসকের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বকেয়া বিল পরিশোধ না করার কারণে বিদ্যুৎ পাচ্ছিলেন না তারা। 
খবর পেয়ে প্রত্যন্ত এলাকার ৫ গ্রামের লোকজনের বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসেন শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের সন্তান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ শিশির মনির। তিনি জেলা প্রশাসক ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলেন। বকেয়া বিল পরিশোধ করা হলে সংশ্লিষ্টরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দেন। 

এরপর গত রোববার দিরাই অগ্রণী ব্যাংকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের টাকা পরিশোধ করা হয়। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বকেয়া বিলের ৮ লাখ টাকা পরিশোধের করেন আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির। এতে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার আশা রয়েছেন পাঁচ গ্রামের মানুষেরা।

আগোয়াই গ্রামের বাসিন্দা হবিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, ‘আইনজীবী শিশির মনির যখন আমাদের এলাকায় এসেছিল তখন আমাদের কষ্টের কথা শুনে তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। তিনি কথা রেখেছেন, এখন ৫ গ্রামের মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া সহজ হবে। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।’

বিজ্ঞাপন

আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘বিদ্যুতের আলো থেকে মানুষ বঞ্চিত থাকবে এটা ভাবা যায় না। তাই সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে মানুষের জীবনমান উন্নত হবে।’ 

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, শাল্লার ওই পাঁচ গ্রামের বিদ্যুতের দুর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। 

আরটিভি/এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |