বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশের মাটিতে আর ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে দেওয়া হবে না। তারা ক্ষমতায় থাকতে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, লুটপাট করেছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লার মুরাদনগরের ডিআর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। তারা অবৈধভাবে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছিল। তারা বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, এত উন্নয়নের রোল মডেল হলে দেশ ছেড়ে পালালেন কেন? জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ফাঁসির কাষ্ঠে গেলেও কখনো দেশ ছেড়ে পালাননি। মূলত আওয়ামী লীগকে পালাতে হয়েছে নিজেদের অপকর্মের কারণে। দুর্নীতি করে সার্টিফিকেট না থাকা ব্যক্তিকেও বিচারপতি বানিয়েছেন। তাদের আমলে নিয়োগ পাওয়া আপিল বিভাগের বিচারপতিরা ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য। তাদের ব্যবহার করে নিজেদের পক্ষে রায় আদায় করেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াত। যাকে তাকে জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দুই হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকের লাশ গুম করা হয়েছে। কারও লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারে এই সরকার দৃশ্যমান কোনো কাজ করছে না।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রশাসনে এখন ফ্যাসিবাদের দোসররা বুক ফুলিয়ে চলছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, ভোটার তালিকায় গোঁজামিলের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বচ্ছ ভোটার তালিকা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।
জামায়াতের কারাবন্দী সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
মুরাদনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবু নছর মুহাম্মদ ইলইয়াস এর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল সভাপতি ও সাবেক চাকসু ভিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর মুরাদনগরে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ হওয়ায় নেতাকর্মীরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত। সকাল ৯টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই নেতাকর্মীদের পাদচারণায় মুখর হয় ডিআর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে মিছিল সহকারে অংশগ্রহণ করেন নেতাকর্মীরা।
মাওলানা আমির হোসেন ও মাওলানা মিজানুর রহমান এর যৌথ পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আমির আব্দুল মতিন, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আলমগীর সরকার, কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতে সেক্রেটারি ও দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শহীদ, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক লোকমান হাকিম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য ডা.মোহাম্মদ তফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, বাঙ্গরা বাজার থানা আমির মাস্টার আব্দুর রহিম, উপজেলা সাবেক আমীর, মনসুন মিয়া, সাবেক আমীর, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক। সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ইউসুফ সোহেল, অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ, শিবিরের কুমিল্লা উত্তর জেলা সেক্রেটারি শাকিল আহমেদ, মাওলানা আবু বক্কর।
কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে চাকসুর সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট জসীমউদ্দিন সরকার বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী শক্তিকে দমন করার জন্য আয়নাঘর তৈরি করেছিল যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
তিনি বলেন, খুনিদের দল আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচার করতে হবে। গণতন্ত্র আর আওয়ামী লীগ একসঙ্গে চলে না।
আরটিভি/এআর