• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কোথাও ঠাঁই হয়নি পঞ্চগড়ের ৯৫ বয়সী বৃদ্ধা ইশারনের

পঞ্চগড় সংবাদদাতা, আরটিভি অনলাইন

  ০৯ মে ২০২০, ১০:১৭
কথাও ঠাঁই হয়নি পঞ্চগড়ের ৯৫ বয়সী বৃদ্ধা ইশারনের

৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধার নাম ইশারন নেছা। বয়সের ভারে তেমন হাটা-চলা করতে পারেন না। নিজের ৪ মেয়ে ও সৎ ছেলে থাকলেও সবার কাছেই এখন বোঝা হয়ে উঠেছেন তিনি। কেউ তার কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছে না এমনকি তার কোনো সন্তানই তাকে আর রাখতে বা দায়িত্ব নিতে চান না। কোথাও কোনো আশ্রয় বা ঠাঁই না পাওয়ায় নিরুপায় হয়ে তিনি জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর উত্তরা বাজারের এক দোকানের সামনে বসে বসে কাঁদছেন।
জানা গেছে, ৯৫ বয়সী ওই বৃদ্ধার বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে। তিনি ওই এলাকার মৃত মজত আলীর স্ত্রী। তিনি ৫ সন্তানের জননী, তাদের মধ্যে বড় মেয়ে মারা গেলেও বাকি ৪ মেয়েকে তিনি বিয়ে দিয়েছেন মির্জাপুর এলাকায়। তাছাড়া তার সৎ ছেলেও আছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ইশারন নেছার স্বামী মারা যাবার পর তিনি তার স্বামীর বাড়িতে থাকতেন। ৪ মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর তিনি সৎ ছেলেদের একজনের কাছে থাকতেন আর তিনি তার দেখভাল করতেন। কিন্তু সেই ছেলে হঠাৎ করে মারা যায় পরে বৃদ্ধা তার সব বিক্রি করে একই ইউনিয়নের পাখোরতোল এলাকায় সেজো মেয়ে আজিমা বেগমের বাড়িতে উঠেন এবং ১৫/১৬ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে তিনি সেখানেই থাকতেন। গত এক মাস আগে বৃদ্ধা ইশারন নেছা তার অন্য মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে হঠাৎ পিছলে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পান তারপর থেকে তিনি আর হাটতে পারেন না। এই অবস্থায় মাকে টানতে না পেরে মেয়ে আজিমা তার মেয়েকে সৎ ভাইয়ের বাড়িতে রেখে আসলে তার সৎ ভাই বৃদ্ধার দেখাশোনার পর বোন আজিমার বাড়িতে রেখে আসলে আজিমা আবার কয়েকদিন পর তার ভাইয়ের বাড়িতে রেখে আসেন তার মাকে। এভাবে একপর্যায়ে তারা তাদের মাকে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বুধবার সন্ধ্যায় রেখে চলে যান। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা রাতেই বৃদ্ধার মেয়ে আজিমার বাড়িতে দিয়ে আসলে পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার আজিমা তার বৃদ্ধা মাকে মির্জাপুর উত্তরা বাজারের একটি দোকানের সামনে রেখে চলে যান।

বৃদ্ধার সৎ ছেলে জহিরুল ইসলাম জানান, আমি খুবই দরিদ্র মানুষ। তারপরও এক মাস আমার বাড়িতে রেখেছিলাম কিন্তু তিনি বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করেন। আমার স্ত্রীও অসুস্থ তাই তাকে দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আমার বোন আজিমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। এখন তার আপন মেয়েই তাকে রাখতে চান না।
অন্যদিকে বৃদ্ধার আপন মেয়ে আজিমা বেগম জানান, আমি নিজেই অসুস্থ তাই মায়ের পরিচর্যা করতে পারি না। মা বিছানায় প্রসাব পায়খানা করেন, তিনি হাটা-চলা করতে পারেন না। তাছাড়া মাকে রাখার মতো আমার বাড়িতে কোনো ঘর নাই। তাই তাকে দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করছি। তাই সৎ ভাইয়ের কাছে রেখে এসেছিলাম।
বৃদ্ধা ইশারন নেছা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার আজ কেউ নেই, আমার আপন মেয়ে ও সৎ ছেলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে আপনারা আমার স্বামীর বাড়িতে একটা ঘর তুলে দেন। আমি সেখানেই যেন মরতে পারি। সবাই আমার মেয়ে আজিমার বাড়িতে রেখে আসলে আমার মেয়ে আবার আমাকে এখানে রেখে চলে যায়।
এ বিষয়ে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর আলী জানান, বৃদ্ধা ইশারন তার সবকিছু বিক্রি করে তার আপন মেয়ে আজিমার বাড়িতে ওঠেন এমনকি সারাদিন ভিক্ষা করে যা পেতেন তা সব তার মেয়েকে দিতেন। পায়ে আঘাত পাওয়ায় তিনি আর ভিক্ষা করতে না পারায় এখন আর তার মেয়ে তাকে রাখতে চান না তার বাড়িতে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো একটা ব্যবস্থা করতে পারবো কিন্তু দেখভালের দায়িত্ব তার সন্তানদের নিতে হবে। আমরা তার সন্তানদের সাথে বসে আলোচনা করে দেখব কী করা যায়।
এসএস/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ফ্ল্যাটে ঢুকে বৃদ্ধাকে মারধর, রানু হিজড়া গ্রেপ্তার
হাতিয়ায় বসতঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘুমন্ত বৃদ্ধার মৃত্যু
হাতিয়ায় আগুনে পুড়ে ঘুমন্ত বৃদ্ধার মৃত্যু
মেসির নাম বলে অপহরণকারীর হাত থেকে রক্ষা পেলেন বৃদ্ধা
X
Fresh