• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ইউএনও সোহেল মারুফ

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া, আরটিভি অনলাইন

  ১৯ মে ২০২০, ১৩:৫৯
ইউএনও কুষ্টিয়া খুলনা
ছবি সংগৃহীত

‘রাত পোহাবার আর কতো দেরী পাঞ্জেরি?’ এই প্রশ্নের উত্তর যুগে যুগে হয়ে আসছে। জাতির বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে বৈশ্বিক মহামারী করোনাতে এই প্রশ্ন আবারও জেগেছে। কবে ঠিক হবে সব। দেশের মানুষ ঘরবন্দি। অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে লড়াই করছে সবাই। অজানা আতঙ্ক মানুষের মাঝে। এর মধ্যে পাঞ্জেরি হয়ে দায়িত্বশীলতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। এরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মানব কল্যাণে। এই রকম মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ। সরকারি দায়িত্বের বাইরে গিয়েও সংকট মোকাবেলায় রাত দিন এক করে কাজ করে চলেছেন তিনি।

করোনাকালে এলাকাবাসীর কাছে মানবতার ফেরীওয়ালা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন সোহেল মারুফ। যখন যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেই বিষয়েই দায়িত্ব কর্তব্যের বাইরে গিয়েও মানবিকতা নিয়ে কাজ করে চলেছেন এই ইউএনও। বর্তমানে তিনি ঈদ করতে ঢাকা থেকে আত্মীয় স্বজনদের ভেড়ামারায় আসতে নিরুৎসাহিত করছেন।

করোনা মোকাবেলায় ফ্রন্ট লাইনের এই যোদ্ধা প্রথমেই আলোচিত হন স্বল্প মূল্যের ভ্রাম্যমাণ দোকান করে। ত্রাণ পেয়ে গরিব মানুষ দুই বেলা খেতে পারলেও অসহায় হয়ে পড়েন মধ্যবিত্তরা। কর্মহীন এসব মানুষের জন্য ইউএনও মে মাসের শুরুতেই ভ্রাম্যমাণ স্বল্পমূল্যের দোকান করেন। নিত্যপণ্য নিয়ে এই দোকান পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে মানুষের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। এখানে ইউএনও ভর্তুকি দিয়ে বাজার মূল্য থেকে কম মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করেন। এই কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ করেন। এতে এলাকার মানুষ চরম উপকৃত হচ্ছে।

স্বল্পমূল্যের এই দোকানে ৪৩-৪৫ টাকা কেজির চাল বিক্রি করা হয় ২৮ টাকায়। ৯০-১০০ টাকা কেজির মসুর ডাল বিক্রি করা হয় ৭০ টাকায়। ২৫ টাকা কেজির আলু বিক্রি করা হয় ১০টাকা কেজিতে। কাঁচা মরিচও বিক্রি করা হয় ১০টাকা কেজি দরে। ৫০-৫৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ৩০ টাকা কেজি, এলাকার খেত থেকে সংগ্রহ করা ঢেঁড়স বিক্রি করা হয় মাত্র পাঁচ টাকা কেজি। যার বাজার মূল্য ২০টাকা। এভাবে অন্য সবজিও ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১০০ টি স্বল্প আয়ের পরিবার এই সুবিধা পায়।

ইউএনও সোহেল মারুফ আরটিভি অনলাইনকে জানান, এই ভ্রাম্যমাণ দোকানের বয়স এক মাস হতে চললো। এই সময়ে তার প্রায় দেড় লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। যা তিনি নিজস্ব মানুষদের কাছ থেকে সহায়তা নিয়েছেন আর বাকি নিজের বেতন থেকে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন যতদিন লকডাউন থাকবে তার এই ভ্রাম্যমাণ স্বল্প মূল্যের দোকান চলবে।

এদিকে সরকার ঘোষিত লকডাউনের শুরু থেকেই তিনি কর্মহীন, অসহায় গরিব মানুষের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন। এই সব অসহায় মানুষ যাতে না খেয়ে কষ্ট পায় সেই জন্য তিনি সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করেও মানুষের মধ্যে দিয়েছেন। এতে নিজের বেতনের টাকাও খরচ করেন।

ভেড়ামারা উপজেলার ছয় ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ইতিমধ্যে সাড়ে আট হাজার অসহায় মানুষকে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইউএনও সোহেল মারুফের কারণে উপজেলার অনেক বিত্তবানরা স্ব-ইচ্ছায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছেন। বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বা ব্যক্তি পর্যায়ের কাছ থেকে আয়োজন করে আরও ১০ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

৩৩৩ নম্বরে অথবা ইউএনও এর নিজস্ব নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে বা ফোন করলেই বাসায় পৌঁছে যায় খাদ্য সহায়তা। এতে রাত দিন নেই ফোন করার আধাঘণ্টার মধ্যেই তার বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেন ইউএনও। এভাবে আরও প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সমাজের বিত্তবান ও নিজস্ব মানুষদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে শুধুমাত্র শিক্ষকদের এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

ভেড়ামারায় দুই জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরপর সোহেল মারুফ ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত সকল স্বাস্থ্যকর্মীকে পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছেন। এমনকি সকল ওয়ার্ডে কর্মরত ৫৯ জন গ্রাম পুলিশকেও পিপিই দেয়া হয়েছে।

মানুষ যখন সাধারণ রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসতে ভয় পায়, ঠিক এই সময়ে ইউএনও ভেড়ামারার একটি ক্লিনিক হাসপাতালকে রাজি করিয়ে তাদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেন। মাহমুদা ক্লিনিক একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ডাক্তার ও ওষুধ নিয়ে গিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা ও বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। এটিও লকডাউন থাকা অবদি চলবে বলে জানানো হয়েছে।

ধান কাটার শ্রমিক চাহিদা মেটাতে তিনি নিজ উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনবল একত্রিত করে ৩০০ জন শ্রমিককে নাটোর জেলায় পাঠান। একইসঙ্গে উপজেলার কোনও আবাদি জমি পড়ে থাকবে না। সরকারি এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।

সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যে ভেড়ামারা উপজেলার সকল ইউনিয়নে ২৭০০ মানুষের মধ্যে ১০ কেজি চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পৌরসভাতে এ সংখ্যা ছিল ১৩৫০ জন। এছাড়া প্রতি ইউনিয়নে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ দুঃস্থ মহিলাকে বিনামূল্যে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। যা পায় ছয় ইউনিয়নে ১৯৮০ জন। তারা এটা প্রতি মাসে পেয়ে থাকে। এসব কাজকে শক্তহাতে তদারকি করেন ইউএনও।

এ সব বিষয়ে ইউএনও সোহেল মারুফ বলেন, দেশের সকল সমস্যা নিজের মনে করলেই দায়িত্বের বাইরেও কিছু দায়িত্ব চলে আসে। সেভাবেই সমস্যা নিজের মনে করে, দেশটাকে নিজের মনে করে তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কুষ্টিয়ায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়
ফেসবুকে লাইভের জেরে চাকরি গেল এসপির
কুষ্টিয়ায় ভাই-বোনসহ ৩ শিশুর ডুবে মৃত্যু
টিকিট ছাড়া পার্কে ৫ শিশু, কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন ইউএনও
X
Fresh