• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মেধাবী রিংকির লেখাপড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে?

বরগুনা প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ০৩ জুন ২০২০, ০৯:৫৯
Meritorious Rinki's education will be stopped?
ছবি সংগৃহীত

বরগুনার এক অদম্য কিশোরীর নাম রিংকি সরকার। চরম অভাব অনটন আর শত বাধা পেরিয়েও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অর্থাভাবে তার উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাহলে কি তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে ?

বরগুনা শহরের পশ্চিম বরগুনা এলাকায় এক শতাংশ জমির ওপর তাদের ভাঙ্গাচোরা একখানা টিনের ঘর আছে। বৃষ্টি হলেই হাড়ি পাতিল যা আছে তার সবই প্রায় পেতে রাখতে হয় ঘরের মেঝেতে। ফুটো চাল দিয়ে পানি পড়ে ঘরের মধ্যে। তার বাবা বেঁচে নেই। স্ট্রোক করে মারা গেছেন বছর তিনেক আগে।

বাবা সুমন্ত সরকারের অবস্থাও ভালো ছিল না খুব একটা। ফুটপাতে চুন বিক্রি করতেন তিনি। আর এখন স্বামীহীনা সংসারে তিন মেয়েকে নিয়ে বড়ই অসহায় রিংকি সরকারের মা মিনতি সরকার। বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে স্থানীয়দের চাঁদার টাকায় বিয়ে দিয়েছেন।

পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী ছোট মেয়ে রূপা সরকার আর রিংকি সরকারকে নিয়ে ভাঙ্গা ঘরেই বসবাস মিনতি সরকারের। বাজার থেকে আস্ত সুপারি কিনে তা ঘরে বসে মা আর দুই মেয়ে মিলে কেটে আবার দোকানে দোকানে ঘুরে বিক্রি করেন মিনতি সরকার। আর এতেই যে রোজগার তাতেই চলে রিংকি সরকার, ছোট মেয়ে রূপা সরকার আর মা মিনতি সরকারের জীবনসংসার। দুই মেয়েরই লেখাপড়ার খরচ অনেক। তাহলে কি বন্ধ হয়ে যাবে রিংকি সরকারের লেখাপড়া ?

বরগুনা শহরের কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে রিংকি সরকার। কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান জানিয়েছেন, একজন মা কতোটা কষ্ট করতে পারেন, তার সন্তানদের জন্য তার অনন্য উদাহরণ রিংকির মা মিনতি সরকার। বাজার থেকে আস্ত সুপারি কিনে সারাদিন ধরে তা হাতে কেটে আবার বাজারের দোকানে দোকানে ঘুরে তা বিক্রি করে যে টাকা রোজগার তাই দিয়ে চলে তাদের সংসার। এর মধ্যে দুই মেয়ের লেখাপড়াও চালিয়ে গেছেন মিনতি।

শত কষ্ট আড়াল করেছেন তবুও কাউকে কিছুই বুঝতে দেননি তিনি। রিংকির মা মিনতি সরকার জানিয়েছেন, তার জীবনটাই চলছে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে দুঃসময় কেটেছে এবং কাটছে এখন এই করোনার মধ্যে। দীর্ঘদিন চা-পানের দোকান বন্ধ ছিল তখন তার সুপারি বিক্রিও বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল আয় রোজগারও। তারপরেও বাড়ি এসে কিছু কিছু ক্রেতা তার কাছ থেকে সুপারি কিনেছেন। সহযোগিতাও করেছেন। আর এভাবেই একরকম কোনোমতে তিন মায়ে-ঝিয়ে বেঁচে আছেন।

তার ছোট মেয়ে রূপাও অনেক মেধাবী। কিন্তু কীভাবে চালাবেন তিনি তার দুই মেধাবী মেয়ের পরবর্তী লেখাপড়া তা তিনি জানেন না। রিংকি জানায়, তার মা অনেক কষ্ট করেন। কতো কষ্ট করে দোকানে দোকানে ঘুরে সুপারি বিক্রি করেন তার মা। তারপর সারাদিনতো সুপারি কাটার কাজ আছেই।

সুপারি কাটতে কাটতে তার মায়ের দুহাতে দাগ হয়ে গেছে। রিংকি আরও জানায়, ছোটবোন রূপাকে নিয়ে মা মিনতি সরকারকে সুপারি কাটার সহযোগিতা করার ফাঁকে ফাঁকে লেখাপড়া করেই তার এই ফলাফল। অল্পের জন্য সে গোল্ডেন জিপিএ পায়নি। যদি সে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে তবে উচ্চ মাধ্যমিকে সে গোল্ডেন জিপিএ পাবে এমনটাই আশা তার। বড় হয়ে একজন সফল আইনজীবী হতে চায় রিংকি সরকার।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর
স্ত্রীকে নকল সরবরাহ, স্বামীর ২ বছরের কারাদণ্ড
বাজি ধরে পুকুর পার হতে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
ঘোড়াঘাটে ৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী বহিষ্কার, ৬ শিক্ষককে অব্যাহতি
X
Fresh