কুড়িগ্রামে বন্যায় ভোগান্তিতে ৩ লাখ বানভাসি
কুড়িগ্রামে প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজানের পানিতে ধরলা নদীর পানি বেড়ে আবারো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি পয়েন্টে পানি কমলেও এখনও বিপদসীমার ওপরে রয়েছে। ফলে টানা তিন সপ্তাহ ধরে বন্যার্ত মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছেন।
এদিকে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল এলাকায় ভাঙা রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার আরও ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত করেছে। এনিয়ে জেলার ৩ লাখ পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৭৫টি গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে আছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি আবারো বেড়ে সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমর নদীর নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। জেলার ৯ উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের অন্তত তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে অনেক কষ্টে পড়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্য সংকট। বিশুদ্ধ পানির অভাবে কোনও কোনও এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া ও আমাশয়সহ নানা পানিবাহিত রোগ।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস জানায়, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় এ পর্যন্ত ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে জেলা শহরসহ সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানির স্রোতে জেলা শহরের বড় গরুর হাট সদরের যাত্রাপুর ও ঘোগাদহ ইউনিয়নের একটি সড়কের দুটি জায়গা পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ায় বড় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে ঈদের আগে এই হাটের বেচাকেনা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ইজারাদার ও গরুর খামারিরা।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে রৌমারীতে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধের ৩০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে রৌমারী উপজেলা পরিষদসহ বাজার। ফলে চরম বিপাকে রয়েছে এখানকার মানুষ। একই অবস্থা বিরাজ করছে চর রাজিবপুর উপজেলায়। বন্যায় উপজেলা পরিষদে পানি ওঠায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও চিলমারীতে কাঁচকোল ব্রিজের কাছে রাস্তার ওপর দিয়ে পানি ওঠায় চিলমারী শহরে পানি ঢুকেছে।
অন্যদিকে কুড়িগ্রাম পৌরসভা ও নাগেশ্বরী পৌরসভার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় লোকজন নিরাপদ আশ্রয় না পাওয়ায় মহাসড়ক, বাঁধ অথবা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ওইসব এলাকার পরিবারগুলো।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে এবং ২৫ তারিখ নাগাদ প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার আশংকা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, এরই মধ্যে ৪৭২ মেট্রিক টন চাল ও অর্ধকোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও শিশুখাদ্য হিসেবে ২ লাখ টাকা ও গবাদি পশুর খাদ্য বাবদ ২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এসএস
মন্তব্য করুন