জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ৪ নেতাকর্মীর সনদ বাতিলসহ ১৬ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পেটোয়া গ্যাং’ হিসেবে পরিচিত ছিল।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে এ তথ্য জানানো হয়। তদন্ত কমিটি ও গত বছরের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের সিট দখল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ যথাক্রমে যাযাবর নাঈমের অনুসারী ও মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে ও এই সংবাদ সংগ্রহকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ওরফে যাযাবর নাঈমের অনুসারীরা।
এ ঘটনার ১১ মাস পর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের একজনের স্থায়ী বহিষ্কার, স্থায়ী বহিষ্কারসহ স্নাতক সনদ বাতিল দুজনের, স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল ২ জনের, তিন বছরের জন্য বহিষ্কার ৩ জন, দুই বছরের জন্য বহিষ্কার ১ জন, এক বছরের জন্য বহিষ্কার ৫ জন, স্নাতকোত্তর সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত ১ জনের ও ১ জনের স্নাতক সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও এই সংবাদ সংগ্রহকালে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাইদ এবং দৈনিক যায়যায় দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীব। মারধরের ঘটনার রাতেই তৎকালীন বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে আহ্বায়ক, তৎকালীন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহকে সদস্য এবং তৎকালীন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্য সচিব করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের ১১ মাস পর শাস্তির সিদ্ধান্তে পৌঁছায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ফাহাদ বিন সাঈদ আরটিভি নিউজকে জানান, তৎকালীন সময়ে বিচারের নামে প্রশাসনের নানা টালবাহানায় এতদিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল ক্যাম্পাসে। ঘটনার ১১ মাস পর আমরা বিচার পেয়েছি। আজ শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে সকলের। অপরাধ করে পার পাওয়া সম্ভব না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি নবাব মো. শওকত জাহান জানান, প্রকাশ্যে দুই গণমাধ্যমকর্মীর ওপর দফায় দফায় হামলার দীর্ঘ সময়ের পর অপরাধীরা বিচারের আওতায় এসেছে। এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতা থেকে বেরিয়ে বিচারের সংস্কৃতিতে প্রবেশ করল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করে অনেক আগেই এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত ছিল, কিন্তু আগের প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবেই তা সম্ভব হয়নি। বর্তমান প্রশাসনের এমন সাহসী সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পূর্বের প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো, সেই তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং যারা হামলার শিকার হয়েছিল তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়গুলো শৃঙ্খলা বোর্ডে আলোচনা পর সিন্ডিকেটে অনুমোদন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো ধরনের অন্যায় কার্যক্রম সংঘটিত হলে, প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা বিধি মোতাবেক যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।
আরটিভি/এমকে/এস