বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রশাসন। তবে, কয়েকজন শিক্ষার্থী এ হামলায় জড়িত নয় বলে জানান। এদিকে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেও মামলার আসামি হওয়ার দাবি করেছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক ও ধোঁয়াশা।
জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন বন্দর থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই শিক্ষার্থী ও সমন্বয়কদের সভায় ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা করে। এমন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) কে এম সানোয়ার পারভেজ লিটন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। অথচ একটি পক্ষ বলছেন, শুধু হামলাকারীরাই নয়, যারা জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি মুছে ফেলেছে ও আন্দোলনকারীদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে।
এজাহারে ১১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুম্মান হোসেনের নাম। কিন্তু তার দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকলাম, ৫ আগস্টে আমাকে মেরে উলঙ্গ করলো, তারপরেও যারা উলঙ্গ করে মারলো তারাই প্রক্টরকে জিম্মি করে মামলায় আমার নাম দিয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করি এবং পুলিশি হামলায় আহত হই।
রুম্মান বলেন, থানায় অভিযোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে আমাদের কয়েকজনের নাম ঢুকিয়ে দিয়ে দিলো। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের মাহমুদুল হাসান তমালসহ তার পক্ষের লোকজন এই হয়রানি করছে। কারণ, তমাল ও তার লোকজন আমাকে মারধর করেছিল, সেজন্য তাদের নামে মামলা দিয়েছিলাম বলে আজ আমাকে ফাঁসানো হলো।
অন্যদিকে ২০ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয় ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সিতাব খানের নাম। তার দাবি, হামলার ঘটনার সময় তিনি বরিশালেই ছিলেন না। সিতাব খান বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেসময় আমি বরিশালেই ছিলাম না। ঘটনাস্থলের ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেই আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো। যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চূড়ান্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়, সেদিনই আমার নামটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছে একটি পক্ষ। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এই পক্ষ প্রক্টরকে চাপ প্রয়োগ করে আমার নামে মামলা দিছে। আমি হামলার ঘটনায় সম্পূর্ণ নির্দোষ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তারা বলেন, শুনেছি কয়েকজনের নাম ব্যক্তিগত স্বার্থে মামলায় অন্তর্ভুক্তি করেছে। সেটা যদি হয়ে থাকে তা দুঃখজনক। তবে শুধু হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা নাম দিছে, নাকি অন্যকোন প্রেক্ষাপট নিয়ে তাদের নাম দিছে তা জানা নেই। আমরা চাই আসলেই যারা প্রকৃত দোষী তারা শাস্তি পাক। নির্দোষ ব্যক্তিরা যেন কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হন। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের ভীতরে আলোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ড. এ টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এবং হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী আমরা প্রথমে ১৯ জনের তালিকা পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে থানায় অভিযোগ দেওয়ার আগে আরও পাঁচজনের নাম আমাদেরকে জানায় একটি পক্ষ। সেখানে সকল ক্রিয়াশীল সংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলো। পুলিশ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এবার পুলিশ আইন অনুযায়ী তদন্তের ভিত্তিতে বিচার প্রক্রিয়া করবে। যে নির্দোষ সে ছাড়া পাবে, সেটা একান্তই পুলিশের তদন্তের ব্যাপার।
বরিশাল বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে।
আরটিভি/এএএ