ভালোবাসা, এক অদ্ভুত অনুভূতির নাম। আর এই ভালোবাসার কারণে কত মানুষ কত পাগলামি করে থেকে। যে ভালোবাসায় অটুট থাকে বন্ধন, যে ভালোবাসায় থাকে উদারতা কিংবা এক বুক আশার বার্তা- সেই ভালোবাসাই টিকে থাকে যুগ থেকে যুগান্তরে। আর এই ভালোবাসার মানুষকে সঙ্গে নিয়েই শত বাধা-বিপত্তি পার করে অনেকেই সংসার করছেন বছরের পর বছর।
আমাদের শোবিজে তারকাদের মধ্যে রয়েছে তেমনই কিছু ভালোবাসার নজির। যখন শোবিজের এক প্রান্তে হরহামেশা বিচ্ছেদ হচ্ছে অররহ ঠিক অপর প্রান্তে ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন তারা। চলুন ভালোবাসা দিবসে জেনে নেওয়া যাক সেই তারকাদের সম্পর্কে—
সৈয়দ হাসান ইমাম-লায়লা হাসান
লায়লা হাসানের জন্য উপযুক্ত পাত্র খুঁজছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবর্ষ উপলক্ষে তিনটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম। সেখানেই লায়লা হাসানের সঙ্গে পরিচয়। এরপর ভয়েস অব আমেরিকায় একসঙ্গে নাটক করেন তারা।
তবে এর নেপথ্যে ভূমিকা ছিল লায়লা হাসানের পরিবারের। অবশেষে ১৯৬৫ সালে তখনকার চিত্রনায়ক সৈয়দ হাসান ইমামের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন লায়লা হাসান। তাদের কোল আলো করে এসেছে তিন সন্তান। বিয়ের এত বছর পরও তাদের মধ্যে ভালোবাসার কমতি নেই। নিজেদের আঙিনায় ব্যস্ততার পাশাপাশি বিশ্বস্ততায় ভর করে যাপন করছেন সুখের সংসার।
আবুল হায়াত-শিরিন হায়াত
বিনোদন অঙ্গনে হরহামেশা সংসার ভাঙার খবর শোনা যায়। এর মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে। তেমনই ব্যতিক্রম আবুল হায়াত, ভালোবেসে সংসারজীবনের ৫৫ বছর পূর্ণ করেছেন তারা। ১৯৭০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মেজ বোনের ননদ মাহফুজা খাতুন শিরিনকে বিয়ে করেন আবুল হায়াত। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াত। এর ছয় বছর পর জন্ম নেয় নাতাশা।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে কথা হয় এ অভিনেতার সঙ্গে। জানান সম্পর্ক,সংসার ও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কিছু মন্ত্রের কথা। বলেন, সম্পর্ক টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর। প্রতিটি সম্পর্কেই বিশ্বাস থাকা অপরিহার্য।
আবুল হায়াত বলেন, সংসার জীবনে পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ভীষণ জরুরি। দুজন মানুষ দুই পরিবেশ থেকে এসে একসঙ্গে বসবাস শুরু করে। এজন্য উভয়কে ছাড় দিতে শিখতে হয়। সম্পর্কের ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল হতে হয়।
রামেন্দু মজুমদার-ফেরদৌসী মজুমদার
একুশে পদক প্রাপ্ত দুই গুণীজন রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। ১৯৭০ সালের ১৪ মার্চ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। একে একে ৫৪ বছর পার করেছেন একসঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটক করতে গিয়ে তাদের প্রথম পরিচয়। রামেন্দু মজুমদারের দায়িত্ব ছিল রাতে ফেরদৌসী মজুমদারকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া।
সেখান থেকে শুরু হয় তাদের প্রণয়। তবে তখনকার প্রেক্ষাপটে দুই ধর্মের মানুষের প্রেমকে সহজ করে দেখা হতো না। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দুইজনের মিলন হয়। তাদের বিয়েতে সাহায্য করেছিলেন ফেরদৌসী মজুমদারের দুই ভাই মুনীর চৌধুরী ও কবির চৌধুরী। দু’জনের ৫৪ বছরের সুখী বিবাহিত জীবনে আছে একমাত্র সন্তান ত্রপা মজুমদার।
রফিকুল আলম-আবিদা সুলতানা
দেশের জনপ্রিয় সংগীত জুটি রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা। তারাও প্রেম করে বিয়ে করেছেন। বাংলাদেশ বেতারে তাদের দেখা হয় সত্তরের দশকে। তাদের পরিচয় করিয়ে দেন লাকী আখন্দ। গান গাইতে গাইতে তাদের প্রেম জমে ওঠে। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন দুই সংগীত তারকা।
কনকচাঁপা-মইনুল ইসলাম খান
কনকচাঁপার কিশোর বয়স থেকেই মইনুল ইসলাম খানের সঙ্গে পরিচয়। বিটিভির ‘নতুন কুঁড়ি’র শিল্পী ছিলেন কনকচাঁপা। সেখানেই দুজনের দেখা-সাক্ষাৎ হতো। কনকচাঁপার প্রথম গাওয়া গানের সুরকার ছিলেন সুরকার ও সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খান। প্রথম গাওয়া গানের সুরের প্রেমে পড়েছিলেন কনকচাঁপা। একসময় সুর থেকে সুরকারের প্রতি ভালো লাগা অনুভব করেন। পরবর্তী সময়ে পারিবারিকভাবে তাদের দুজনের বিয়ে হয়। প্রায় তিন দশক একসঙ্গে পার করে দিয়েছেন এই তারকা দম্পতি।
আজিজুল হাকিম-জিনাত হাকিম
নাট্যজগতের পরিচিত জুটি আজিজুল হাকিম ও জিনাত হাকিম। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আজিজুল হাকিম তখন জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা। নাটকের মহড়া করতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। মহড়ার ফাঁকে ফাঁকে তাকে প্রায়ই দেখা যেত রোকেয়া হলের গেটে। একসময় জানা যায়, এই হলেই থাকতেন তার জীবনসঙ্গী জিনাত। ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন তারা। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে এখন তাদের সুখের সংসার।
শহীদুজ্জামান সেলিম-রোজী সিদ্দিকী
১৯৯৩ সালের বিজয় দিবসে রোজী-সেলিম দম্পতির যুগল জীবনের শুরু। বিয়ের বছর থেকেই রোজী সিদ্দিকী ‘ঢাকা থিয়েটার’-এ কাজ শুরু করেন। তারও এক দশক আগে থেকেই শহীদুজ্জামান সেলিম এই নাট্যদলের কর্মী ছিলেন। দুই মেয়েকে নিয়ে সুখে-দুঃখে একসঙ্গে অনেক দূর পেরোলেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের এই তারকা দম্পতি।
নাঈম-শাবনাজ
নব্বই দশকের শুরুতে ‘চাঁদনী’ সিনেমা মাধ্যমে অভিষেক ঘটে সাড়া জাগানো এই তারকা জুটির। এরপর জুটি বেঁধে অনেক সিনেমা করেন। অভিনয় করতে করতেই দু’জন কাছাকাছি আসেন। তাদের প্রেমের গুঞ্জন ছিল দর্শকদের কাছে তখনকার আলোচনার বিষয়বস্তু। পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয় ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর। বিয়ের পর দু’জনেই অভিনয় ছেড়ে সংসারে মনোযোগী হন। তাদের সংসারে আছে দুই কন্যা সন্তান। বড়জন ইতোমধ্যে গানের জগতে এসেছেন।
ওমর সানী-মৌসুমী
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’র তুমুল সাফল্যে তখন সালমান শাহ-মৌসুমী জুটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তাদের জুটি ভেঙ্গে যায়। তখনই ওমর সানীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন মৌসুমী। তারা দুজনে প্রথমবার দিলীপ বিশ্বাসের ‘দোলা’ সিনেমায় অভিনয় করেই দর্শকদের মনে দোলা দেন।
এরপর একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছে এই জুটি। সিনেমায় কাজের মধ্যেই দু’জনের সম্পর্ক গভীর হয়। তাদের প্রেমের গুঞ্জন ছড়ায়। সেই গুঞ্জনের রেশ না কাটতেই ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এই জুটি। ১৯৯৬ সালে বিয়ে হওয়া এই দম্পতিও ঘরে রয়েছে এক পুত্র ও এক কন্যা।
জাহিদ হাসান-মৌ
নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান। অপরদিকে দেশসেরা মডেল ও নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ। তাদের প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন হানিফ সংকেত। ইত্যাদির একটা মিউজিক ভিডিও করতে গিয়ে প্রথম পরিচয় দু’জনের। এরপর সেটা রূপ নেয় প্রণয়ে। তবে তাদের মিলন এত সহজে মিলেনি।
মৌয়ের পরিবার থেকেই বেশি অসম্মতি ছিল। অতঃপর দুইজনের একক সিদ্ধান্তে বিয়ে করেন ১৯৯৬ সালে। একসময় পরিবারও মেনে নেয়। তাদের সংসারে এসেছে ছেলে পূর্ণ ও মেয়ে পুষ্পিতা। সেদিনের সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না তা প্রমাণ করে তাদের এত বছরের সুখের সংসার।
তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত
নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত। এক বন্ধুর আমন্ত্রণে চারুকলায় এসে বিপাশার ছবি আঁকা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৌকীর আহমেদ। সেখান থেকেই শুরু। এরপর জনপ্রিয় ‘রূপনগর’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সময় সম্পর্ক গভীর হয়। পারিবারিক সম্মতিতেই সাড়ম্বরে বিয়ে হয় ১৯৯৯ সালের ২৩ জুলাই। এ জুটির ভালোবাসার সংসারে পূর্ণতা দিয়েছে দুই সন্তান। শোবিজের অন্যতম সুখী দম্পতি তৌকীর-বিপাশা।
মোশাররফ করিম-জুঁই
ভালোবেসে ঘর বেঁধে সুখে সংসার করছেন এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম ও অভিনেত্রী জুঁই করিম। ২০০৪ সালের ৭ অক্টোবর গাঁটছড়া বাঁধেন তারা। বিয়ের চার বছর আগে থেকে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক শুরু। ঢাকার মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় মোশাররফের এক বন্ধুর কোচিং সেন্টার ছিল। সেখানেই মূলত মোশাররফের সঙ্গে জুঁইয়ের প্রথম পরিচয়। এরপর একটা সময় জুঁইকে ভালো লাগার কথা প্রকাশ করেন মোশাররফ। জুঁইও পছন্দ করতেন তাকে। তারপর থেকেই শুরু ভালোবাসার জয়যাত্রা। তাদের সুখের সংসারে পূর্ণতা দিয়েছে একটি ছেলে।
ফারুকী-তিশা
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিশাকে। কিন্তু বিয়েটা হবে হচ্ছে করেও বছরের পর বছর আটকে ছিল। অবশেষে ২০১০ সালের ১৬ জুলাই ফারুকী ও তিশা ঘটা করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের ঘর আলো করে রেখেছে এক কন্যাসন্তান।
আরটিভি/এএ/এআর