কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকির মধ্যে প্রতিদিনই সেনাদের মধ্যে সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই দেশ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালিয়েছে। যুদ্ধের যে আশঙ্কা তা দিনদিন বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশের নেতারা দুই পক্ষকে সংযত থাকার পাশাপাশি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। এবার এ ইস্যুতে মুখ খুলেছে আফগানিস্তান।
দ্য ডন রোববার (৪ মে) এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা কাবুল ও ওই অঞ্চলে ‘সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলবে বলে আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (সিএসএস) উপপরিচালক হেকমাতুল্লাহ জালান্দ বলেন, ভারত-পাকিস্তান যেহেতু আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতে অবস্থিত, তাই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে এই অঞ্চল ও আফগানিস্তানে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বর্তমানে আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ নীতির আলোকে উভয় দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ ছাড়া আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্তটি আফগান ব্যবসায়ীদের প্রভাবিত করবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হামলায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে ভারত। তবে হামলায় জড়িত থাকার কথা শুরু থেকেই অস্বীকার এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ তদন্তে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছে ইসলামাবাদ। তারপরেও পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তানিদের ফিরে যেতে বলা হয়েছে। সব ধরনের বাতিল হয়েছে ভিসা। সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতও করেছে ভারত।
পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে একই ধরনের পদক্ষেপ দিয়েছে পাকিস্তানও। সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতে ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষিদ্ধ, সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ জানান, সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতের পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে দেখছে পাকিস্তান। তিনি বলেছেন, যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের ‘রক্ত ফুটছে’। হামলায় জড়িত প্রত্যেককে কঠিনতম শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শুধু তাই নয়, সীমান্তে যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় নিজের তিন বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন মোদি।
বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকরা বলছেন, পাকিস্তান যে কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছে, তার জোরালো প্রমাণ এখনও দেখাতে পারেনি ভারত। এ অবস্থায় দিল্লি কোনো পদক্ষেপ নিলে বিশ্ব মঞ্চে তার ন্যায্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চমলান সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা যদি বাড়তে থাকে তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে।
আরটিভি/আরএ/এস