গত কয়েক বছর ধরেই ভারতে রাজনৈতিক মেরুকরণের অভিযোগ জোরালোভাবে শোনা গেছে। বিশেষ করে ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে পুরো পশ্চিমবঙ্গ রীতিমতো বিভক্ত। এতদিন এ বিষয়ে কিছু না বললেও এবার সরব হয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন বলেন, জয় শ্রীরাম যে খুব প্রাচীন বাঙালি বক্তব্য, এমনটা তো শুনিনি। বরং আমার মনে হয় এই শব্দ ইদানিংকালের আমদানি।
তিনি বলেন, এখন শুনছি বাংলায় রামনবমী খুব হচ্ছে। আগে এতো হতো বলে শুনিনি। সেদিন আমার চার বছরের নাতনিকে জিজ্ঞাসা করলাম টিভিতে যা দেখে তোমার সবচেয়ে কাকে ভালো লাগে? ও বললো, মা দুর্গাকে। ঠিকই বলেছে, এই বাংলায় মা দুর্গার যা প্রতিপত্তি, তার সঙ্গে রামনবমীর তুলনা চলে না।
এদিকে রাজনীতিতে ভগবানের নামে স্লোগান নিয়ে নিজের বিরক্তির কথাও জানিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই শব্দ ঠিক কোন জায়গায় পড়ে জানি না। তবে বর্তমান সময়ে এর ব্যবহার দেখে মনে হয় লোককে প্রহার করতে গেলেই এই শব্দ ব্যবহার করতে হচ্ছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী কলকাতায় অমর্ত্য সেনের স্মৃতিচারণ নিয়ে এদিন গান্ধী ভবনে ওই আলোচনার আয়োজন করা হয়। সেখানেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান, নিজের রাজনৈতিক অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এদিন খোলামেলা কথা বলেন তিনি।
কলকাতা কি তাহলে পিছিয়ে পড়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যদি এই শহরে শুধু একটি বিশেষ ধর্মাচরণ করার জন্য কিছু মানুষকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়; তবে সেটাই পিছিয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট।
ছাত্রজীবনে নিজের বামঘেঁষা অবস্থানের কথাও এদিন খোলাখুলিভাবে ব্যক্ত করেন অমর্ত্য সেন। তবে তিনি কখনও সক্রিয় রাজনীতি করেননি বলেও জানান।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে-সে কথা এদিনও আবার ব্যক্ত করেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলিমরা মিলেমিশে বাস করে এবং এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে। তার কথায়, বাংলার বেশিরভাগ মুসলিমই আদতে রূপান্তরিত মুসলিম। তারাই প্রথম ভারতে এসে বাজার স্থাপন করেন। মধ্য এশিয়া থেকেই মূলত এই বাজারের ভাবনা এসেছিল।
এ/পি