হাতছানি দিয়ে ডাকছে ঢেউ খেলানো পাহাড়

মো. শাহরিয়ার ইউনুস, স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি

শুক্রবার, ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ , ০২:৪২ পিএম


হাতছানি দিয়ে ডাকছে ঢেউ খেলানো পাহাড়

রূপের রাণী পার্বত্য খাগড়াছড়ি। উঁচু-নিচু অসংখ্য ঢেউ খেলানো পাহাড়ের বুক চিরে আঁকা বাকা হয়ে সর্পিল রাস্তা চলে গেছে দিগন্ত জুড়ে। পথ পথে প্রকৃতির অপরুপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য যে কোনো ভ্রমণ পিপাসুদের মন কাড়তে সক্ষম। বছরের যে কোনো সময় এখানকার প্রকৃতি তার আপন মনেই সাজে।

বিজ্ঞাপন

সরকার দৃষ্টি দিলে এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোকে আধুনিক ও বিশেষ পর্যটন জোন করা সম্ভব। সম্ভাবনাময় এ খাতকে কাজে লাগলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে দেশ।

পার্বত্য এ খাগড়াছড়ির মূল পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। এখানে আছে গা ছমছম করা অনুভূতির রহস্যময় অন্ধকার সূড়ঙ্গ (গুহা), আছে ওয়াচ টাওয়ার, সুউচ্চ পাহাড়ের উপর আলুটিলা তারেং। তারেং থেকে পাখির চোখে দেখা যায় পুরো খাগড়াছড়ি শহর। যা আপনাকে মূহুর্তেই নিয়ে যাবে অন্য এক ভূবনে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও এ জেলায় আছে পাহাড়ের উপর দেবতা পুকুর (স্থানীয় ভাষায় মাতাই পুখুরি), রিছাং ঝর্ণা, জেলা পরিষদ পার্ক, হর্টি কালচার পার্ক, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, তৈদু ছড়া ঝর্ণা, হাজাছড়া ঝর্ণা, পানছড়ি অরণ্য কুটিরসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বর্ণিল সংস্কৃতির জীবন যাত্রা।

এসব দেখতে দেখতে আপনি এ জেলার ওপর দিয়ে যেতে পারবেন আরেক পার্বত্য উপত্যকা দিগন্ত বিস্তৃত উচু নিচু ঢেউ তোলা পথ বেয়ে পর্যটকদের কাছে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত মেঘ কন্যা রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালীতে।

বিজ্ঞাপন

ঢেউ খেলানো পাহাড়ের দেয়াল, বিস্তৃর্ণ দিগন্ত জুড়ে সবুজের বেষ্টনী, বিভিন্ন রঙের পাহাড়ি ফুল, মেঘ-সূর্যের আলোর লুকোছুরি আভার স্পর্শ আর প্রকৃতির অকৃত্রিম নয়নাভিরাম নানান দৃশ্যগুলি যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে খাগড়াছড়ি। যেখানে আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘের ভেলা আর বুক ভেদ করে উঠা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে আপনাদের আসেতেই হবে এ জনপদে।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র তারেং: অপূর্ব সৌন্দর্য্যে ভরপুর দর্শনীয় স্থান খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। ১ হাজার ফুট উঁচু আলুটিলা নামক পাহাড়ের উপর এই পর্যটন কেন্দ্র। এখান থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহরটাকে দেখা যায় পাখির চোখে। এ জায়গায় দাঁড়িয়ে দিগন্তে তাকালে মনে হবে যেন আকাশ পাহাড়ের গায়ে মিশে গেছে। এখানেই আছে বৌদ্ধদের স্বর্ণালী উপাসনালয় আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য। এখানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান হচ্ছে রহস্যময় সূড়ঙ্গ। যার দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার। ঘুটঘুটে এই অন্ধকার গুহার ভেতরে প্রবাহিত পানি পা ধুয়ে দেয় ঘুরতে আসা পর্যটকদের। গুহার প্রবেশ পথেই ১০ টাকা করে পাওয়া যায় মশাল। এ মশাল নিয়েই ঢুকতে হয় সূড়ঙ্গে।

রিছাং ঝর্ণা: আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের একটু দূরেই এই ঝর্ণা। পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতির গড়া এই ঝর্ণার পানি অঝোর ধারায় ঝরছে। এ ঝর্ণাটিকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে ও পিকনিকে আসেন পর্যটকরা।

দেবতা পুকুর : খাগড়াছড়ি জেলার আরেক দর্শনীয় স্থানের নাম দেবতা পুকুর। জেলা শহর থেকে খাগড়াছড়ি মহালছড়ি সড়কের নুনছড়ি নামক স্থানে এর অবস্থান। দেড় হাজার ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ৪০০মিটার দীর্ঘ ও ২০০ মিটার প্রস্থ এই পুকুরে ১২মাস একই সমান পানি থাকে। এতো উপরে সৃষ্ঠ পুকুরের অজানা রহস্য ও ১২ মাস পানি থাকায় স্থানীয় নৃ গোষ্ঠীরা মনে করে এই পুকুর কোনো দেবতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

জেলা পরিষদ পার্ক: খাগড়াছড়ি জেলার পর্যটন শিল্পে নতুন সংযোজন ২২ একর ভূমি নিয়ে জেলা পরিষদ পার্ক। শহরের খুব কাছাকাছি জিরো মাইল সংলগ্ন এই পার্ক তৈরি হয়েছে। এ পার্কের বিশেষ আকর্ষণ কৃত্রিম ঝুলন্ত সেতু। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিদিনই পর্যটক ভীড় জমায় এ পার্কে। এখানে পিকনিক করতে রয়েছে বিশেষ সুবিধার রেষ্ট হাউজ।

তৈদু ছাড়া ঝর্ণা : খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৈদুছড়া ঝর্ণা। এ ঝর্ণাকে ঘিরে পাশে রয়েছে আরো ৩টি ছোট ঝর্ণা এবং ২টি মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। বর্তমানে তৈদুছড়ার ঝর্ণা দেখতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন পর্যটকরা।

পানছড়ি অরণ্য কুটির : খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ৪৮ ফুটের বৌদ্ধমুর্তি। দৃষ্টিনন্দন এই বৗদ্ধমুর্তি দেখতে প্রতিদিন দেশি বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসেন। যেতেই চোখে রাবার ড্যাম। যা এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নতুন সংযোজন।

লেক আর কৃত্রিম ঝুলন্ত সেতু বিডিআরের জন্মভূমি রামগড় : খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম প্রাচীন সীমান্ত শহর রামগড়। রামগড়কে বলা হয় বিডিআরের জন্মভূমি। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই রামগড়ে দেখা মিলবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বিভক্তকারী ফেনী নদী। রয়েছে বেশকটি মুল্যবান ভাস্কর্য।  উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে রয়েছে কৃত্রিম লেক, ঝুলন্ত সেতু, বোটানিক্যাল গার্ডেন। আছে সীমান্তের গা ঘেষা দুই ধারে চা বাগান। এই চা বাগান খাগড়াছড়ি পর্যটনকে করেছে আরো সমৃদ্ধ।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান: খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের থাকার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি পর্যটন মোটেল রয়েছে। চেঙ্গী নদীর তীরে নির্মিত মোটেলের পাশে ফুলের বাগানের বেঞ্চে বসে সময় কাটানো ও চেঙ্গী নদীর একেঁ বেঁকে পানি চলার দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। তাছাড়া মোটেলের সামনেই রয়েছে আনসারের নিয়ন্ত্রিত হেরিটেজ পার্ক। পর্যটকদের সময় কাটানোর আরেকটি মনোমুগ্ধকর জায়গা। পর্যটকদের থাকার জন্যে জেলা শহরে রয়েছে হোটেল নূর, অরণ্য বিলাস, ইকোছড়ি ইনসহ বেশকটি আধুনিক হোটেল।

জেলার  বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য রয়েছে পিক আপ, চাঁদের গাড়ি (জীপ গাড়ি), সিএনজি।

প্রকৃতি ও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোকে সমৃদ্ধ করে গড়ে উঠতে পারে বিশেষ অর্থনৈতিক পর্যটন জোন। এতে করে এখানকার অধিবাসিদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি সরকার উদ্যোগ নিলে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন শিল্প। আর এ শিল্পকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন সরকার। এজন্য দরকার সকলের সহযোগিতা।

আরওয়াই/জেএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission