হোম কোয়ারেন্টিনে মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ছে পারিবারিক নির্যাতন
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত নারীদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে ইয়েমেন, মরক্কো ও মিশরের এক-চতুর্থাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। খবর ডয়চে ভেলের।
গত সপ্তাহে তিউনিসিয়ার নারী বিষয়ক মন্ত্রী আসমা শিরি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, তার দেশে হোম কোয়ারেন্টিনের সময় পারিবারিক নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত মাসের মাঝামাঝিতে কারফিউ জারি করে তিউনিসিয়া সরকার। তারপর থেকে পারিবারিক নির্যাতন পাঁচ গুণ বেড়েছে।
অথচ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অর্ধেকের বেশি দেশে পারিবারিক নির্যাতন রোধে আইন আছে। বাস্তবে এর কার্যকারিতা অবশ্য দেখা যায় না বললেই চলে।
বিবাহিত নারী
বিয়ের পর থেকে স্বামীর হাতে প্রতিনিয়ত মার খান লায়লা (ছদ্মনাম)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নারী বলেন, এটা আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। অনেকটা শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার মতো। আমার স্বামী আমাকে যখন মারতে শুরু করেছিল তখন আমি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। পরে লোকলজ্জার ভয়ে নিজেই স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসি।
শিশুরাও ঝুঁকিতে
লায়লার স্বামী সন্তানদেরও প্রচণ্ড মারধর করেন। বাবার বাড়ি থেকে ফেরার পর লায়লা প্রায়ই তার সাত মেয়ে ও এক ছেলের শরীরে কালশিটে দেখতে পান।
স্বামী কাজের কারণে বাইরে থাকলেই কেবল বাড়িতে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন বলে জানান লায়লা। কিন্তু এখন সরকারের কড়াকড়ির কারণে তার স্বামী কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছেন না। এর ফলে লায়লা ও তার সন্তানদের ওপর নির্যাতন বেড়ে গেছে।
লায়লা একা নন
আরব দেশগুলোর বেশিরভাগ নারীকে এভাবে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নিজ দেশ থেকে তুরস্কে পালিয়ে আসা আয়শার শরণার্থী জীবনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তার স্বামী প্রতিদিন তাকে এবং তার সন্তানদের মারধর করেন।
ডয়চে ভেলেকে আয়শা (ছদ্মনাম) বলেন, আমি সহবাস করতে রাজি না হওয়ায় একবার তিনি আমাকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। করোনাভাইরাসের কারণে তুরস্কে কারফিউ জারি হলে তিনি তো কাজে যেতে পারবেন না। তখন হয়তো তিনি আমাকে আরও মারবেন।
ঘরের কাজের চাপও বেড়েছে
সাধারণত নারীরাই ঘরের কাজ সামলান। হোম কোয়ারেন্টিনের এই সময়ে তাদের ওপর কাজের চাপ আরও বেড়েছে৷ লেবাননের সমাজকর্মী রানিয়া সুলেইমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের সব লোক সারাদিন বাড়িতে থাকছেন। তাদের প্রয়োজন মেটাতে নারীরা বাড়তি চাপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বামীরা ঘরে থাকায় স্ত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে তাদের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে, না পারলে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
এ/পি
মন্তব্য করুন