হাঁ করে শ্বাস নেওয়াকে গ্রিক শব্দে অ্যাজমা বা হাঁপানি বলে। বাচ্চাদের বেশি হাঁপানি রোগ হওয়ার কারণ হলো তাদের শ্বাসনালির অতিসংবেদনশীলতা। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর বুকে শোঁ শোঁ শব্দ ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শ্বাসনালি আক্রান্ত করার নানান ভাইরাস রয়েছে। এগুলো হলো রাইনো, আরএসভি, অ্যাডিনো, ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা। এসব ভাইরাসের সংক্রমণে এই অ্যাজমার সূচনা হয়।
এ ধরনের অ্যাজমা সাধারণত শিশুর প্রি-স্কুল বা প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ার প্রথম দিকে সেরে যায়, পরবর্তীকালে আর থাকে না। আবার অনেকের ক্রনিক অ্যাজমা থাকে। এ সমস্যা অনেক শিশুর প্রি-স্কুল বয়সেও শুরু হয়। নানা ধরনের অ্যালার্জির সংসর্গ ও কিছু অসুখ এই রোগের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এসবের মধ্যে রয়েছে—
- পোষা প্রাণীর পালক, ধুলাবালু, তেলাপোকা, মোল্ডস, মৌসুমি ঘাস, ফুলের রেণু।
- বাতাসের দূষণজাত, টোব্যাকো, ওজোন, নাইট্রোজেন অক্সাইডসহ নানা গ্যাস।
- পারফিউম, পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ, ফরমালডিহাইডসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ।
- ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস।
- ব্যায়াম, তীব্র কান্না বা হাসির জোয়ার, জোরে জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস।
- রাইনাটিস, সাইনোসাইটিস, জি-ই রিফ্লাক্স ইত্যাদি অসুখ।
- অ্যাসপিরিন ও আরও কিছু ধরনের ওষুধ গ্রহণের প্রতিক্রিয়া।
যেসব শিশুর বাবা-মা অ্যাজমায় আক্রান্ত, যেসব শিশুর অ্যাকজিমা, অ্যালার্জিক রাইনাটিস, খাবারে অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে, তাদের দীর্ঘমেয়াদি অ্যাজমায় ভোগার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া যারা মারাত্মক নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিসে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদেরও এই ঝুঁকি রয়েছে। ছেলেসন্তান, জন্মের সময় কম ওজন, ধূমপায়ী পরিবেশে বেড়ে ওঠা, বুকের দুধ পান না করিয়ে যেসব শিশুকে ফর্মুলা খাওয়ানো হয়, তারাও উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধক
বর্তমানে শিশুর অ্যাজমা রোগের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। এ রোগে শিশুবিশেষজ্ঞ ও অ্যাজমা বিশেষজ্ঞের সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা জরুরি। হাঁপানির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার, দরকার হলে নেবুলাইজার, মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ ছাড়া বেশ কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ধূমপান পরিহার করা, শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ পান করানো, শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার নিশ্চিত করা, সময়মতো ও নিয়মিত টিকাদান, শিশুকে জলবসন্তের টিকা দেওয়া এবং প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দেওয়া।