• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ছো ট গ ল্প

পৃথিবীর সন্তান

মো: ইসরাফিল আলম এমপি

  ০১ জুন ২০২০, ১৬:২২

রাহাত যেন এক আলালের ঘরের দুলাল। গ্রামীণ জমিদারের একমাত্র সন্তান। অনেক চেষ্টা চরিত্র করার পর প্রথম সন্তান তারপর দুটি মেয়ে লতা ও পাতা। রাহাতের বাবা আলম তালুকদার অসাধারণ সমাজ সেবক, পরোপকারী এবং পরিশ্রমী।
একই সাথে একজন ভালো সালিশ দরবারের পারদর্শী ও ব্যাপক জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত একদম সহনীয় নেতা। তার কাজ হলো চাষাবাদ করে, পুকুর পুশকুনিতে মাছের চাষ করে, কিছু স্টোক ব্যবসা করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানো। এখানে সেখানে বেড়াতে যাওয়া। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও জনহিতকর কর্মসূচিগুলোতে প্রণোদনা দেওয়া এবং বই পড়া আর মানুষজনকে উপদেশ দেওয়া। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার পাশাপাশি অতিথিদেরকে ডাল ভাত দিয়ে আপ্যায়ন করা। খুব আকর্ষণীয় রসিক এবং মিশুক প্রকৃতির এই স্থানীয় মাদবর বংশের সন্তান ছেলে মেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে আদর্শবান ও নীতিবান হতে সবসময়ই উপদেশ-পরামর্শ ও অনুশাসন দিয়ে থাকে।
বড় ছেলে রাহাত কে নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ নাই। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষী শুভানুধ্যায়ী পরিচিতজনদের সবাইকে সুযোগ পেলে বলে রাখে-‘তোমরা আমার ছেলেটার দিকে খেয়াল রেখো, আমি তো সব সময় নজর রাখতে পারি না, তোমরা দেখো কোথায় যায় কার সাথে মেলামেশা করে, কোনো দোষ-ত্রুটি চোখে পড়ে কিনা, নিজের সন্তানের মতো করে উপদেশ পরামর্শ প্রয়োজন হলে শাসন করো। কারণ আমি চাই আমাদের সন্তান শুধু আমার বংশের জন্য নয় সকল মানুষের জন্য একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। মনে রেখো রাহাত আমার ঘরে জন্মগ্রহণ করে সে এই পৃথিবীর বুকে পদার্পণ করেছে একটি সত্য। কিন্তু চূড়ান্ত বিবেচনায় কোনো মানুষই শুধু তার পরিবারের বা নিজের জন্য পৃথিবীতে আসে না। প্রত্যেকেই আসে এই পৃথিবীর সন্তান হিসেবে, সারা পৃথিবীর ও প্রকৃতি সেবা করার জন্য। তাই রাহাত শুধু আমার সন্তান নয় ও তোমাদের, এই সমাজের এবং এই পৃথিবীর সন্তান। তাকে কিন্তু কোনোভাবেই নষ্ট হতে দিও না । আমার অনুরোধ রইলো আমি তোমাদের কাজে, তোমাদের সেবায় ও কল্যাণী ব্যস্ত থাকি। তাই রাহাতের দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে পারি না। কিন্তু তোমাদের কাছে আশা করতে পারি ওর দিকে একটু দৃষ্টিপাত করতে’।

আলম সাহেবের এই বিনয় এই উদারতা ও সরলতা কিন্তু সমাজ সংসার গভীর জীবনবোধ এর কথা এবং সকলের কাছে নিজের অক্ষমতাকে তুলে ধরার দৃষ্টিভঙ্গিকে সবাই খুব সম্মান এবং গুরুত্বের সাথে দেখে। তাই স্কুলের শিক্ষক আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী গ্রামবাসী সবাই রাহাতের দিকে আলাদাভাবে দৃষ্টি রাখে। রাহাত সকলের আদর-স্নেহ-ভালোবাসা-আদেশ-উপদেশ এর ভিতর দিয়ে একজন নির্বিবাদী-নিরব-ভদ্র বিনয়ী ছেলে হিসেবে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠতে থাকে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গ্রাম্য মেলা হাট-বাজারে তার শিষ্টাচারযুক্ত উপস্থিতি সকলের প্রশংসা অর্জন করতে থাকে।
এমনি করে অষ্টম শ্রেণী পাস করার পর রাহাতকে ভর্তি করা হলো জেলার হাই স্কুলে এবং থাকার বন্দোবস্ত করা হলো হোস্টেলে। নবম শ্রেণী পাস করার পাশাপাশি সে ভালো ফলাফল এবং শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে অতি সহজেই একজন ভালো ছাত্র হিসেবে, ভালো সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ামোদী ছাত্র হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করল।
এরই মধ্যে দেশে হয়ে গেল সাধারণ জাতীয় নির্বাচন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তার দল নৌকা মার্কা নিয়ে যখন নির্বাচনে মাঠে নামলো- তখন নির্বাচনী প্রচারণায় সারাদেশের মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং বিপুল ভোটে নৌকা মার্কা কে বিজয়ী করল। কারণ বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে এক অসাধারণ অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি ভৌগোলিক স্বাধীনতার সুন্দর স্বপ্ন উপস্থাপন করেছেন। যা এর আগে কোনো রাজনৈতিক নেতা করতে পারেনি দেখাতে পারেনি। এই কাল জয়ী এবং বাংলায়-শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত-অসহায় মানুষের প্রাণের নেতা শেখ মুজিবের কণ্ঠে যে কথা উচ্চারিত হয় তা যেন সাধারণ মানুষের কথা- প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষার আকুতি, বাংলা দুঃখী মানুষের আর্তনাদের কথা।
আর নির্বাচনের পরেই শুরু হয়ে গেল দেশের অভ্যন্তরে গোলযোগ। ক্ষমতা হস্তান্তর করা না করার ষড়যন্ত্র। কারণ পাকিস্তানিরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির শাসন মেনে নিতে কোনোদিনই তারা রাজি ছিল না। তারা শেখ মুজিবকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের সুযোগ না দিতে নানামুখী ষড়যন্ত্র, তালবাহানা ও ফন্দি ফিকির করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ দলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো -বাংলাদেশে অবস্থিত মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ দোসর এবং পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ এবং সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের সাথে নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল পাকাতে থাকে। পাকিস্তানের সরকারি ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে।
এই ষড়যন্ত্র প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে সাধারণ মানুষ দ্রুত বুঝতে পারে, আওয়ামী লীগ এবং তৎকালীন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে।

রাতে হাই স্কুলসহ সারাদেশের কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শরীর চর্চার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতারা মোটিভেট করার পাশাপাশি তাদেরকে সীমিত আকারে বন্দুক চালানোর এবং কিভাবে শত্রুদের চোখ এড়িয়ে গেরিলা যুদ্ধ করতে হয় তার ট্রেনিং দেওয়া শুরু হয়। রাহাত গভীর মনোযোগের সাথে ট্রেনিং গ্রহণ করে। তার একঝাঁক সহপাঠীরা গোপনে ট্রেনিং নিতে নিতে প্রকাশ্যেই খেলার মাঠে খেলতে খেলতে সেই ট্রেনিংয়ের কসরত করতে লাগলো। তারপর শুরু হলো মার্চ মাসের ২৫ তারিখের সেই ক্রাকডাউন । বঙ্গবন্ধু তার পূর্ব প্রস্তুতি মোতাবেক সাথে সাথেই বিডিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য, শেষ রক্ত দিয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে উৎখাত করার আহ্বান সম্প্রচারিত করেন। খবর প্রচারিত হওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার খবর শোনামাত্রই সারা দেশের মানুষ ফুঁসে ওঠে । দেশের ছাত্র যুবক শ্রমিকরা পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ ও প্রতিরোধ করার সংগ্রাম শুরু করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিভিন্নভাবে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। এমনি সময় আলম তালুকদার সাহেব জেলা শহরে এসে রাহাত কে নিয়ে তার একমাত্র সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, হাজার হাজার ছাত্র যুবক যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি অনেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং নেওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী ভারতে পাড়ি জমাতে থাকে। এরকম একটি দলের সাথে যোগাযোগ করে রাহাত একদিন রাতে সবাইকে ঘুমন্ত রেখে পালিয়ে ভারতে চলে যায় ট্রেনিং নেওয়ার জন্য। যাবার আগে ছোট্ট একটি চিঠি সে তার বাবার পাঞ্জাবির পকেটে রেখে আসে যেখানে লিখা ছিল- ‘বাবা তুই ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছো, আমি এই সমাজের, এই দেশের, এই পৃথিবীর সন্তান। তাই বৃহত্তর দায়িত্ব পালনের জন্য ভারতে ট্রেনিং নিতে নিতে গেলাম। জানি তোমরা আমাকে অনেক ভালোবাসো জানতে পারলে যেতে দিবে না। তাই লুকিয়ে চলে গেলাম কিন্তু বীরের বেশে তোমাদের কাছে যেন ফিরে আসতে পারি’।

সেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য মুক্তি ক্যাম্প এ থেকে মানবেতর জীবনযাপন এর মধ্য দিয়ে তারা ট্রেনিং গ্রহণ করে। এবং যুদ্ধ যখন শেষের দিকে তখন তারা অস্ত্রসহ সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়ে পাঞ্জাবি বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীদের কে প্রতিরোধ করতে করতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে, নিজ এলাকার দিকে আসতে থাকে। পথের মধ্যে তারা হারিয়ে ফেলে সাতজন সহযোদ্ধাকে এবং এক পর্যায়ে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির হাজার বছরের আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার লাল সূর্য উদিত হয়। স্বাধীনতার তিনদিন পর দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেহে বিজয়ের বেশে ফিরে আসে নিজের বাড়িতে।
দেশ স্বাধীনের পর রাহাত এবং তার বন্ধুরা লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার পাশাপাশি এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হয়। ইতিমধ্যেই আলম তালুকদার সাহেব স্থানীয় জনসাধারণের একজন জনপ্রিয় নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে দেশ গড়ার কাজে বঙ্গবন্ধু সরকারের নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম করতে থাকে। রাহাত শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানপন্থীদের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরিবর্তিত সরকার নিমেষের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলামী মূল্যবোধ চালু করার কথা বলে পাকিস্তানসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশ কায়ছমের বিরোধিতা করেছিল সেই সমস্ত রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলো। সরকারের যেন ঈমানী দায়িত্ব হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের কে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা । শুরু হলো দমন-পীড়ন প্রশাসনিকভাবে হয়রানি নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের কে গণগ্রেফতার। শুরু করা হলো বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং অস্ত্র আইনে গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দী করার। জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি অবস্থায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো। খুনি সামরিক কর্মকর্তারা পুরস্কৃত হলো এবং বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যার আসামিদের আইনগত প্রটেকশন দেওয়ার জন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হলো। এই বিভীষিকার মধ্যে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আতঙ্কিত হয়ে, নির্বিকার হয়ে পড়ল সমস্ত জাতি। নির্যাতনের মুখে অনেক আওয়ামী লীগের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করলো। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা আনুগত্য স্বীকার করল ওই সরকারের নেতৃত্বে কাছে। এভাবেই হাজার বছরের সংগ্রাম সাধনা লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার লাল সূর্য এবং আদর্শ ও মূল্যবোধ আবারো মুখ থুবড়ে পড়লো কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে। জাতি হারালো তাদের জাতীয় বীর সন্তানদের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারকে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধকে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় চার নেতা হয়ে গেল বন্দি অবস্থায়ই কারাগারে নির্মম হত্যার শিকার।

ভালো ছাত্র হওয়ার পরেও রাহাতের শিক্ষাজীবন তছনছ হয়ে গেল। কারণ স্থানীয় কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র এবং পাকিস্তানপন্থী সরকারকে সহযোগিতা না করার কারণেই বাবার সাথে রাহাত গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি হলো। অনেকদিন পর তারা কারাগার থেকে বের হয়ে গ্রামে এসে দেখল তাদের সেই আগের সম্মান আর মর্যাদার আসনটি ইতিমধ্যেই নড়বড়ে হয়ে গেছে। কিছু অশিক্ষিত-লোভী এবং অসৎ প্রকৃতির লোকজনের হাতে প্রশাসনের সহায়তায় গ্রামের উন্নয়ন, বিচার সালিশ এর কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে।
বড় মেয়ে লতা বাবা ও বড় ভাইকে দেখতে গিয়ে জেলগেটে নজরে পড়েছে একজন নবীন পুলিশ কর্মকর্তার। তার সাথে হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক হয়ে গেলে ছেলে পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসায় তালুকদার সাহেব ও রাহাত ছোট পরিসরে আত্মীয় স্বজনকে খবর দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান সমাপ্ত করে। কিছুদিন পর অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া কনিষ্ঠ কন্যা পাতা ভগ্নিপতির কাছে চলে যায় নিরাপত্তা এবং পড়াশোনার জন্য। একা হয়ে যায় তালুকদার আর রাহাত।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয় সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় কিন্তু তালুকদার সাহেব সাফ বলে দেন-‘আমি আর কোনো রাজনীতি করবো না, রাজনীতি আমার ভালো লাগেনা! যে দেশে জাতির পিতা এবং দেশের স্থপতি কে হত্যা করা হয়! মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতাদেরকে জেলখানায় বন্দি অবস্থায় বিনা বিচারে খুন করা হয় এবং তাদের বিচার হবে না বলে আইন করা হয়। সে দেশে আর যাই হোক রাজনীতি করা যায় না।’

তারপরেও বিভিন্নভাবে চাপ আসতে থাকে সরকার সমর্থিত নতুন রাজনৈতিক দল যোগদান করতে। এরকম পরিস্থিতিতে তালুকদার সাহেব রাহাতকে বলে-‘বাবা এলাকা ছেড়ে যেখানে গেলে ভালো থাকবে, নিরাপদে থাকবে, দেশ-জাতি এবং মানুষের জন্য দুটো কাজ করার সুযোগ পাবে, সেখানে চলে যাও। কারণ তুমি তো শুধু আমার সন্তান নও! তুমি এই সমাজের, জাতির ও পৃথিবীর সন্তান। তোমার প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত দাবি নাই। যেখানেই থাকো, যেভাবেই থাকো, যে কয়দিন বেঁচে থাকবে-এই জগত সংসারের জন্য, মানুষের জন্য, কাজ করে যাবে। আমি তাতেই আমি খুশি’।
পিতার নির্দেশ পেয়ে সে তার সহপাঠীর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য রাজধানীতে চলে যায় তার ঠিকানা ধরে। সাক্ষাৎ করে এবং ওই বাড়িতে সাময়িক থাকার জন্য আশ্রয়। অতঃপর দুই বন্ধু শলাপরামর্শ করে চলে যায় জাপান। সেখানে গিয়ে বাবাকে পত্র লেখে-‘বাবা আমি শুধু তোমার সন্তান নই, আমি পৃথিবীর সন্তান, এই প্রকৃতির সন্তান। কিন্তু দেশ এখন আমাদের জন্য জন্য নিরাপদ নয়, তাই সুন্দর নিরাপদ দেশ জাপানে চলে এসেছি আমরা দুই বন্ধু। এখানে এসে ভালো আছি। দুমাস পর থেকে তোমাদের জন্য কিছু হাতখরচ পাঠাতে পারবো। এখানে কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করবো নিজেকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারলে এবং দেশের পরিবেশ ফিরে আসলে আবার দেশে প্রত্যাবর্তন করে সমাজসেবা ও দেশ সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করবো। দেশ স্বাধীন করে ছিলাম যে দেশের জন্য, এখনকার বাংলাদেশ আর সেই দেশ নয়। সেখানে তোমরা অশান্তিতে থাকবে তবুও তো মাতৃভূমি, জন্মভূমি, তার মায়া কি ভুলে থাকা যায়? এই দেশমাতৃকার মুক্তির জন্যই তো পালিয়ে গিয়ে অস্ত্র ধরেছিলাম জীবনের মায়া ত্যাগ করে! আজ সেই দেশ ত্যাগ করে প্রবাসী হওয়া যে কত কষ্টের তা তুমি নিশ্চয়ই বোঝো তবুও বেঁচে আছি, ভালো আছি তোমরা দোয়া কর’!
এই চিঠিটি পেয়ে তালুকদার সাহেব অশ্রুসজল চোখে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে আর বলে। তুমি তাই করো যা করলে সবার কল্যাণ হবে মঙ্গল হবে।
মেয়ে জামাই আসা-যাওয়া করে। বছর যায় দিন যায় একসময় আবারো রাষ্ট্রপ্রধান খুন হয়। রাজনীতির পট পরিবর্তন ঘটে। আবারো শুরু হয় তালুকদার সাহেবের উপর প্রশাসনিক চাপ এবং নিপীড়ন। কারণ যিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছেন আগের সরকারের মতো তার ও একখানা রাজনৈতিক দল দরকার। প্রতিটি গ্রামে তার কর্মী-সমর্থক দরকার। তাই শুর হয়েছে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় ব্যক্তিদেরকে দলে যোগদান করানোর প্রক্রিয়া। এবারও তালুকদার সাহেব বলে-‘বাবা আমি রাজনীতি করা ছেড়ে দিয়েছি। আগে রাজনীতি করেছি। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর রাজনীতি আমার ভালো লাগে না। এদেশের রাজনীতি আমাকে আর আকর্ষণ করে না’!
একপর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের চাপ এড়ানোর জন্য সে তার জামাই বাড়িতে চলে যায় এবং জামাইয়ের মধ্যস্থতায় রক্ষা পায়। সেখানেই একজন সামরিক কর্মকর্তার সাথে ছোট মেয়ে পাতার বিবাহ হয় এবং ছোট পরিসরে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে যায়।

রাহাত সীমিত টাকা পাঠায়, সংবাদ পাঠায়! সেই টাকা দিয়ে আলম সাহেব এলাকার গরীব দুঃখী মানুষের সেবা করে শিক্ষা চিকিৎসা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার পাশে দাঁড়ায়। হাট-বাজার, মসজিদ-মন্দির-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করাও দেখেশুনে করা এবং এতিমখানায় দান-খয়রাত করা আর নিজের জায়গা-সম্পত্তি দেখাশোনা করে তার দিন কাটিয়ে দেয়। কখনো বা আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে বেড়াতে যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তার কাছে আসে সদুপোদেশ দেয় বিপদগ্রস্ত মানুষ তার কাছে আসে বুদ্ধি পরামর্শ গ্রহণ করে যুবকরা খেলাধুলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উৎসব আনন্দে গ্রাম্য মেলায় পিকনিকে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সহায়তা নিতে তিনি তাদেরকে সহযোগিতা করে দোয়া-আশীর্বাদ দেন এভাবেই তার সাহেবের দিন যায়, মাস যায়; বছর চলে যায়।
একদিন রাহাতের চিঠি পায় তালুকদার সাহেব। সেই চিঠির মধ্যে জামাই মেয়ের ছবি। রাহাত এক জাপানি মেয়েকে বিয়ে করেছে। সেই দম্পতির ছবি বিবাহ অনুষ্ঠানের ছবি। রাহাত সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাহাত লিখেছে-
‘বাবা,
আমি জানি বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় আমি একমাত্র সন্তান হিসাবে তোমাদের পরামর্শ নিয়ে আমার বিয়ে করা উচিত। কারণ আমি তোমাদের সন্তান কিন্তু তুমি আমাকে শিক্ষা দিয়েছো আমি তোমাদের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে পদার্পণ করলেও প্রকৃত অর্থে আমি এই পৃথিবীর সন্তান। তুমি আদেশ দিয়েছো যেখানে মানুষের কল্যাণ আছে মানুষের আনন্দ আছে মানুষের মুক্তি আছে মানুষের উন্নতি আছে, সেখানেই মিলেমিশে থেকো। আমি জাপানের এই মেয়ের ভালোবাসার আকুতি রক্ষা করতে, তাকে খুশি করতে তাকে সম্মান দিতে বিয়ে করতে বাধ্য হলাম। তোমরা আমার জন্য দোয়া করো। আমি ওকে নিয়ে নিশ্চয়ই সুখী হব। আমাদের উভয়ের একটি কল্যাণময় জীবন উপহার পাবো। তোমাদের দোয়া আমার একান্ত কাম্য। দেশের পরিস্থিতি ভালো হয়নি। যদি উপযুক্ত পরিবেশ কখনো ফিরে আসে তখন দেশে আসবো। তোমাদের সাথে দেখা হবে। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। দশ স্বাধীনের পর সে দেশে থাকতে পারিনা তা যে কত বড় কষ্টের সে আমি উপলব্ধি করি। আমি তোমাদের বোঝাতে পারবোনা, আমার দেহ এখানে থাকলেও মনটা লাল-সবুজের সোনার দেশে পড়তে থাকে। তোমাদের কাছে পড়ে থাকে। বিশ্বাস কর সবুজ ধান বৈশাখের সাজ কালে পালতোলা নৌকা পৌষ মেলা বৈশাখী মেলা নবান্নের উৎসব বসন্তের সেই ফুল ফুটানো বাতাস ঝড়ো হাওয়া আমাকে পাগল করে দেয়। কৃষ্ণচূড়ার লাল রং আমের মুকুল আমাকে ব্যাকুল করে তোলে। কাক ডাকা পাখি ডাকা ভোর আমার ঘুম কেড়ে নেয়। ঘন বাঁশ ঝাঁড়ের ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের আলোক ছটা আমাকে এখনো মুগ্ধকর। রাস্তার মেঠো পথে দাঁড়িয়ে সেই বটগাছ গুলোর ঝিরঝির বাতাসের শব্দ আর শীতল ছায়া স্নিগ্ধতা আমি এখন অনুভব করি। আষাঢ় মাসে নদীর কলতান তাজা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, গাভীর খাঁটি দুধ, পুকুরের তাজা মাছ, গ্রামের মৌসুমী উৎসবের আনন্দ, শৈশব-কৈশোরের সেই মধুস্মৃতি, স্কুলে প্রতিদিন সকাল বেলা আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি জাতীয় সংগীতের সুর মূর্ছনা, আমার হৃদয়ের তন্তীতে বারবার বেজে ওঠে। কিন্তু আবারও বলছি বাবা, যে দেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে ছিলেন, আমরা যা বিশ্বাস করেছিলাম। হৃদয়ের আয়নার ফ্রেমে বেঁধে রাখলেই দেশ কিন্তু আজকের বাংলাদেশ নয়। পরিবেশ এখনো আসেনি বাবা, বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছর অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাকে হত্যার ভেতর দিয়ে সকল প্রচেষ্টা স্বপ্ন সাধনা কি হত্যা করা হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ কিন্তু আমরা চাইনি; তুমিও চাও নি। তাই সেদিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ফেরত আসবে’।
বকুল-হাসনাহেনা-তাজা গোলাপের মৌ মৌ গন্ধ বাতাসের সাথে একাকার হয়ে হৃদয়ের তন্তীগুলোকে আলোড়িত করে তুলতো। সেই মধুময় মুহূর্ত গুলো তো এখনো স্মৃতি দৃশ্যপটে বারবার ফিরে আসে, ভোলা যায় না।
বয়স হতে থাকে আলম তালুকদারের। বিভিন্ন শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাকে দুর্বল করে, নিঃসঙ্গ অবস্থায় কখনো কখনো বাড়িতে থাকতে হয়। কারণ স্ত্রীকে যেতে হয় থাকতে হয় মাঝেমধ্যেই তার মেয়েদের বাসায়। ছোট মেয়েটা ডাক্তার তার কন্যা সন্তানকে দেখে রাখা, সংসার সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব। তাই নিজের ঘরের আর সংসারের দায়িত্বটুকু পালনের সময় কোথায়? তালুকদার সাহেব সেই শুরু থেকেই একটু সংসার বিমুখ, বহির্মুখী মানুষ। ঘর তাকে কখনোই বেঁধে রাখতে পারেনি। জীবনের শেষ বেলায় এসে অতীতের কথা গুলোই তার মনে জাগে। যে ঘর তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। আজ সে বারবার বাঁধা পড়তে চাইলে ও ঘরের বাঁধন তাকে স্পর্শ করে না। আসলে মানুষের জীবনটাই এরকম। জীবনের সূর্য যখন অস্তাচলের দিকে ধাবিত হয় তখন কেউ আর থাকে না; জড়িয়ে রাখতে চায় না। বরং সারা জীবনের অর্জিত বাঁধন গুলো আস্তে আস্তে ঢিলেঢালা হয়ে যায়। অনেক কাছের বন্ধু নিজের অজান্তেই বিনা কারণে দূরে চলে যায়। এভাবেই একদিন সকল বাঁধন ছিন্ন করে অস্তমিত হয় জীবনের শেষ সূর্য। মানবজীবনের এই কঠিন ভাবনাগুলোই আলম সাহেব কে মাঝেমধ্যে ভাবিয়ে তোলে, উদাসীন করে, নিঃসঙ্গ করে। কিন্তু উপায় অন্ত কিছুই সে খুঁজে পায়না।
ও এভাবেই যখন আলম তালুকদার সাহেবের জীবনের স্মৃতিকাতর দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছিল। তখন একদিন চৈত্রের অলস দুপুরে তার হাতে ডাক পিয়ন একটি খাম ধরিয়ে দেয়। আলতো হাতে খামটি খুলে সে দেখতে ও জানতে পারে তার একমাত্র সন্তান নেহালের ঘরে অপরূপ ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান এসেছে। তার নাম রাখা হয়েছে অর্ক।
অর্ক মানে পৃথিবীর সম্পদ। বংশে নবাগত অতিথির মুখ দেখে বিশ্বাস করতে একটু তালুকদার সাহেবের কষ্ট হয়না যে সত্যিই এটি পৃথিবীর সন্তান। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তালুকদার সাহেব জেলা শহরে গিয়ে একজন ব্যবসায়ী বন্ধুর দোকান থেকে টেলিফোনে নেহাল ও নেহাল এর স্ত্রী সুকুমির সাথে কথা বলে এবং নতুন অতিথিকে শুভকামনা জানায়।
ক্রমশ তালুকদার সাহেবের শরীর জীর্ণশীর্ণ হতে থাক; বয়সের ভারে জ্বরা বৃদ্ধিতে। অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবন কাটতে থাকে তার। পাড়া-প্রতিবেশী শুভাকাঙ্ক্ষীরা হয়ে ওঠে তার নিঃসঙ্গতার সাথী। সেবার কাজে নিয়োজিত হয় পাড়ার এক গরিবের সন্তান। স্ত্রী তার অতিথির মত মাঝে মধ্যে আসে আবার চলে যায়, মেয়ে-জামাইয়ের ঘর গোছাতে আর তাদের সন্তানের সেবা যতœ করতে।
একদিন নিহাল তার বাবাকে চিঠি দেয় এবং বেশ কিছু টাকা পাঠানোর কথা বলে অনুরোধ করে সুন্দর একটি বাংলো প্রকৃতির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিচ্ছন্ন বাড়ি করতে কারণ সে তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামে বেড়াতে আসবে। কিছুদিন পর শুরু হয় গ্রামের মধ্যেই শ্বেত পাথরের শুভ্র রঙিন অট্টালিকা নির্মাণের কাজ। এ যেন নীল আকাশের নিচে সাদা মেঘের সাথে একাকার হয়ে যাওয়া অপরূপ একটি বাড়ি।

৬ বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে আর জাপানি স্ত্রীকে নিয়ে নেহাল চলে আসে গ্রামের বাড়িতে অসংখ্য মানুষ শুভাকাঙ্ক্ষীরা আসে তাদের দেখতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় স্ত্রী আর সন্তান যখন কথা বলে তখন মানুষ আনন্দ শ্রবণ করে। তালুকদার সাহেবের আনন্দ-উল্লাসের ঢেউ আশপাশের এলাকা তে হাসলে পরে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয় তার অত্যন্ত বিনয়ী হাস্যজ্জল ছেলে বউকে আর রাজপুত্রের মত গৌর বর্ণের কালো কাল চলো নাতি অর্কের সাথে। সেকি ধুমধাম বাড়িতে; ঘুম নেই তালুকদার সাহেব। নেহালের মা বউ ভাগ্নে-ভাগ্নি সবাই চলে আসি গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনরাও বসে থাকে না বাদ পড়ে না যেন এক মিলন মেলা। অনেক ভোজন রসিক মানুষ তালুকদার সাহেব খাবার পরিমাণ নিজের অজান্তেই বেরে যায় ছেলে মেয়ে নাকি পুতুল সহ তিন পুরুষের পুনর্মিলনী এমনি ভাবে একদিন মধ্যরাতে তার বুকে ওঠে অসহ্য বেদনা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট ডাক্তারের কাছে দেখানোর জন্য শহরে যাবার আর সুযোগ হয় না; তালুকদার সাহেবের জীবনী সহ্য উদিত হবার সাথে সাথে তার জীবনী সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়, মরণের আগে অস্পষ্ট কণ্ঠে সবাইকে বলে যায়-আমি আমার জন্মের পর থেকে দেশের জন্য মানুষের জন্য আত্মনিবেদন করেছি, আমার সন্তান নেহাল কে দেশের সেবায় মানুষের সেবায় অনুপ্রাণিত করেছে। আমার বংশের প্রদীপ অর্ক এসেছে, পিতৃভূমিতে আমি চাই দাদা এবং বাবার মতো অর্থ মানুষের জন্য পৃথিবীর জন্য প্রকৃতির জন্য, নিজেকে নিবেদন করবে ব্যক্তিস্বার্থ এবং লালসা জনতাকে স্পর্শ না করে তার মূল্যবোধ এবং চেতনাকে ক্ষতবিক্ষত না করে, তোমরা সবাই ভালো থেকো আমার জন্য দোয়া করো। পৃথিবীতে হয়তো আমার কোনো প্রয়োজন নেই তাই বিধাতা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তোমরা বিদায় দাও বিদায় তোমাদের সবাইকে বিদায় পৃথিবী এবং প্রকৃতিকে এই কথা বলেই থেমে যায় শ্বাস।
বংশের সংসারের সকল ভার পরে নেহেরু পোর্ট নেহাল এর বউ নিজের থেকেই তার শ্বশুরের জীবনের শেষ উপদেশ কে সম্মান দেওয়ার জন্য নেহাল কে দেশেই থাকতে বলে এবং সেও দেশে থাকার ইচ্ছা পোষণ করে এভাবেই নেহালের আর জাপান যাওয়া হয়ে ওঠে না। ওরা বাংলাদেশের হয়ে যায়। নেহাল অল্পদিনের মধ্যেই এলাকায় জনমনে নিজের গুণাবলী দিয়ে আস্থা বিশ্বাস আর ভালোবাসার আসুন নির্মাণ করে, উপজেলা পরিষদের ভোটে দাঁড়িয়েছে উপজেলার চেয়ারম্যান হয়ে যায় স্বতন্ত্রভাবে তারপর জাতীয় নির্বাচন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের থেকে মনোনয়ন নিয়ে নৌকা মার্কার এমপি নির্বাচিত হয়। এভাবেই নেহাল নতুন করে শুরু করে তার কৈশোর আর যৌবনের সেই স্বপ্ন ভেজা লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞ। মানুষের কল্যাণে এলাকার উন্নয়নে, শিক্ষা- সংস্কৃতিতে, স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার এর ভিত্তিতে কাজ করতে থাকে।
অর্ক জেলা শহর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। অতঃপর সেই লন্ডন যায় ডাক্তারি পেশার পর উচ্চশিক্ষার জন্য। নেহাল তার স্ত্রীকে নিয়ে আত্মমগ্ন হয় দেশ সমাজ আর জনসেবার মহৎ কর্মে। ভাবি একটি পরিবারের তিন পুরুষের জীবনচক্র এগোতে থাকে মহৎ মানবিক মূল্যবোধের চাকার উপর ...
সি/

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিল্প-সাহিত্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh