জানালা বন্ধ রাখলে ঘরের দূষণ ৬৮ শতাংশ বন্ধ করা যায়: গবেষণা
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঘরের থেকে বাইরের বাতাসে চলাফেরাকে সাধারণ মানুষজন বিপজ্জনক মনে করলেও গবেষণায় উঠে এসেছে তার বিপরীত চিত্র। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে বাইরের বাতাসের পাশাপাশি ঘরের অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস। এই দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলেও উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেট্রিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন ও তার দলের গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ইনডোর ইনভাইরন্টমেন্ট’-এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক দলটি ঢাকা শহরের বাসা-বাড়ির অভ্যন্তরীণ বায়ুর গুণগত মান ও এই মানকে প্রভাবিত করার কারণগুলি শনাক্তের চেষ্টা করেছেন। ঢাকা শহরের ৪৩টি বাসা-বাড়িতে এ গবেষণা চালানো হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি ঘরের গড় দূষণের মাত্রা প্রতি ঘন মিটারে ৭৫ দশমিক ৬৯ মাইক্রোগ্রাম। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা থেকে প্রায় ৫ গুণ বেশি। কিছু কিছু ঘরে দূষণের মাত্রা ছিল প্রতি ঘন মিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। যা ঘরের বাসিন্দাদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকার ঘরবাড়ির অভ্যন্তরীণ বায়ুর এই মান অনেক বেশি উদ্বেগজনক বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। জানালা বা অন্যান্য ছিদ্রের সাহায্যে বাইরের দূষিত বায়ুর ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা এবং দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করা ঘরের অভ্যন্তরে বায়ু দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে যারা নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করেন তাদের ঘরে দূষণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম বলে গবেষণায় জানা গেছে।
গবেষণায় জানা যায়, ঘরের ভেতরের দূষণের ফলে মানুষের শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ, ফুসফুসের ক্যানসার, কম ওজনের শিশু জন্মদান, মস্তিষ্ক বিকাশজনিত সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য অবনতি এবং অপমৃত্যুর মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া যাদের আগে থেকে শ্বসনযন্ত্র-সম্পর্কিত রোগ, হৃদ্রোগ ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে, তারাও একই ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য তাফসানা ইয়াসমিন বলেন, ‘ঘরের অভ্যন্তরে বায়ু দূষণের উৎসগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। যখন বাইরে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে, তখন ঘরের জানালা বন্ধ রাখার মাধ্যমে বা এসি ব্যবহার করে বাইরের বায়ুর অনুপ্রবেশ রোধ করা যেতে পারে। এছাড়া রান্নার সময় রান্নাঘরের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, এবং ঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখা দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মানুষ তার দিনের প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ সময় ঘরের ভেতরে কাটায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই বায়ু শরীরে প্রবেশ করে। ঘরের অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ সম্পর্কে সকলেও সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা সাধারণত বাহ্যিক দূষণ সম্পর্কে সচেতন থাকি, কিন্তু ঘরের অভ্যন্তরের দূষণ সম্পর্কে অনেকটাই অবহিত নই। যেহেতু ঘরের দূষণকে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, তাই দূষণ কমাতে উৎসগুলো চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘বিল্ডিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জানালা বন্ধ রাখলে ঘরের ভেতরে বাইরের পিএম ২ দশমিক ৫ দূষণের প্রায় ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত প্রবেশ বন্ধ করা যায়। ঘরের ভেতর এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে হবে। একটি গবেষণায় আমরা পেয়েছি, হেপা-ফিল্টারসহ এয়ার পিউরিফায়ার ঘরের ভেতরে পিএম ২.৫-এর দূষণ অনেক কমিয়ে দেয়।’
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন