জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারছে না ভারত: রিজভী
জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ভারত আমাদের স্বার্থে কখনোই কাজ করেনি। বাংলাদেশ মরে যাক, ধ্বংস হোক—তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। এটি হচ্ছে দিল্লির ঘোষিত নীতি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা থাকলে তাদের অনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করতে কোনো বিঘ্ন হতো না। শেখ হাসিনার পতনে এ দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ, জাতীয়তাবাদী শক্তি কিছুটা স্পেস পেয়েছে, বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে, গণতন্ত্র এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে—এই জিনিসগুলো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ভালো লাগছে না।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব মেরুদণ্ডের ওপর ভর করে দাঁড়াক, তা কখনোই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র চায়নি; আর চায়নি বলেই তারা শেখ হাসিনার পতনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তাদের জন্য তারা বিলাপ করছে, আটক হলে আক্ষেপ করছে, প্রতিবাদ করছে।
ইসকনের দাবি ও তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর ঘাতক সরকারের পতনের পর থেকে ইসকনের অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। তাদের বৈধতা আছে কি না, এ সম্পর্কেও দেশের মানুষ অবহিত নয়। তাদের একজন নেতা, যার বিতর্কিত আচার-আচরণের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে অন্য দেশের বিবৃতির ঘটনা বিরল।
চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বাংলাদেশে লুট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, গুম-খুনসহ ভয়ংকর অভিযোগে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে। চিন্ময় বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে। আর নির্দোষ হলে খালাস পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের একজনের মুক্তির জন্য অন্য দেশের বিবৃতির ঘটনা বিরল।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের খুনিরা যখন বিশ্বজিৎ দাসকে ধাওয়া করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করল, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল, নিপুণ রায়কে রাস্তায় ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিল, তখন তো পার্শ্ববর্তী দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবাদ করতে দেখলাম না। তারাও তো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা যখন দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছিল, হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করল, বাংলাদেশে ইসকন নামে ভুঁইফোড় সংগঠনটিকে কখনো দেখিনি একটি বিবৃতি দিতে। অথচ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা উদ্বেগজনক, যা সারা দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সেই সংগঠনের একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ জানিয়ে অন্য দেশ বিবৃতি দিচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কি আছে?
তিনি আরও বলেন, ভারতের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতিতে প্রমাণিত হয়, তারা বিশেষ কোনো মহলকে মদদ দিচ্ছে এবং বাংলাদেশে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, সে পরিবর্তনকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।
আরটিভি/এসএইচএম
মন্তব্য করুন