• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রদলের ‘গোপন বৈঠক’ কতটা সত্য?

সিয়াম সারোয়ার জামিল, আরটিভি অনলাইন

  ২৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:০৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত কলেজের অধিভুক্তি নিয়ে আন্দোলনের নামে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রদল ও শিবিরের ইন্ধনে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করে আসছে ছাত্রলীগ। রোববার এ নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রদলের 'গোপন বৈঠকের' একটি ছবিও প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। এরপরই তোলপাড় শুরু হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। সংশ্লিষ্ট অনেকের প্রশ্ন, আসলেই কি গোপন বৈঠক হয়েছে?

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজ অধিভুক্তি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সাধারণ শিক্ষার্থীদের' মঙ্গলবারের উপাচার্য ঘেরাওয়ের কর্মসূচিতে হামলা করে ছাত্রলীগ। তবে শুরু থেকেই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো বাম ছাত্র সংগঠনগুলোকেই 'সন্ত্রাসী' বলে আসছে সংগঠনটি। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হবার পেছনে ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম সংগঠনগুলোকে দায়ী করে ক্ষমতাসীন দলটি দাবি করেছে, এই আন্দোলনে ছাত্রদল ও শিবিরের ইন্ধন রয়েছে।

এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে গত ৫ দিন ধরে চলছে টানটান উত্তেজনা। ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই হচ্ছে পাল্টাপাল্টি মিছিল-বিক্ষোভ সমাবেশ। ছাত্রলীগ মাঠে নামিয়েছে সরকার সমর্থিত অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে। আর নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠে নেমেছে প্রগতিশীল জোটভুক্ত বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। দুপক্ষের মধ্যে গেলো কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পক্ষে-বিপক্ষে চলছে অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগ। রোববার সেই উত্তেজনায় নতুন মোড় নেয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের স্ট্যাটাস।

রোববার সকালে সোহাগ একটি ছবি পোস্ট করেছেন। এতে দেখা গেছে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু। তার পাশে ছাত্রদলের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় নেতা সরদার আমিরুল ইসলাম সাগর বসে আছেন। যিনি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় বহিষ্কৃত হয়েছিলেন গত বছরের আগস্টে। তাদের মাঝে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি তুহিন কান্তি দাসকে দেখা গেছে। মুহূর্তেই ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। সোহাগ ওই পোস্টে দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম সংগঠনগুলো আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র করেছে।

তবে এমন অভিযোগের সত্যতা কতটা- তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীর কাছে। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ওই ছবিটি ২০১৬ সালের। আমি তখন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সদ্য সভাপতি এবং তুহিন কান্তি দাশ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন ছাত্রদলের সঙ্গে নতুন কমিটি নেতারা সৌজন্য সাক্ষাত করেছিলাম। এর আগের দিন আমরা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গেও মধুর ক্যান্টিনে সাক্ষাৎ করেছিলাম।

তিনি দাবি করেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন গত ১৭ নভেম্বর ২০১৭ থেকে। অন্যদিকে ২০১৭ সালের আগস্টে সরদার আমিরুল ইসলাম সাগর বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াল ছাত্রদল তাকে বহিষ্কার করে। এ অবস্থায় আন্দোলন নিয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে বৈঠকের খবর একেবারেই অবান্তর।

তিনি বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশের দাবি করে এবং নিজস্ব অনুশীলন ও চর্চায় গণতান্ত্রিক ভাবধারা বজায় রাখে। তাই প্রতিটি সম্মেলনে নতুন নেতৃত্বকে অপরাপর ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ানো একটি প্রচলিত রীতি। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও ঐতিহ্যও। এই ছবি ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। তখনকার ছবির অবয়বের সঙ্গে বর্তমান অবয়বের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তো বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।

অন্যদিকে তুহিন কান্তি দাশ দাবি করেছেন, এই ছবির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের কোনো বৈঠকের প্রশ্নই ওঠে না। এটা ছাত্রলীগের মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। যারা এই মিথ্যাচারের সঙ্গে লিপ্ত হয়েছেন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

তবে লিটন ও তুহিনের এই দাবির সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেছে বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা সরদার আমিরুল ইসলামের ফেসবুক ওয়ালে। তিনি ২০১৭ সালের ১৩ মে ছবিটি পোস্ট করেছিলেন। ওই ছবির সঙ্গে তিনি লিখেছিলেন, 'একজন লিটন নন্দী ও নারী লাঞ্চনার পক্ষ-বিপক্ষ' শিরোনামে একটি লেখাও পোস্ট করেছেন। তাতে পহেলা বৈশাখে নিপীড়কদের হাত থেকে নারীদের উদ্ধারে তার ভূমিকার প্রশংসা করেন। এর আগেও ২০১৬ সালে একই ছবি আরেকবার প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

ছাত্রদলের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় নেতা সরদার আমিরুল ইসলাম সাগরের ফেসবুক আইডিতে ২০১৭ সালের ১৩ মে ছবিটি পোস্ট করা হয়।

এ বিষয়ে কথা কথা হয়, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের সঙ্গে। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত নভেম্বর থেকে জেলে আছেন, রেস্টুরেন্টে সিক্রেট মিটিঙের প্রশ্নই ওঠে না। আর সাগরকে তো দল থেকেই বহিষ্কার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য অনুযায়ী পাকিস্তান আমল থেকেই সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন একে অপরের নতুন নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এটা নিয়ে আপত্তির কারণ দেখি না। বহু পুরোনো একটি ছবি দেখিয়ে ছাত্রলীগ ফায়দা লুটতে চায়। তিনি বলেন, যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা করেছে, তারাই এ ধরনের প্রচার করছে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এভাবে আন্দোলনকারীদের দমিয়ে রাখা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান মধুর ক্যান্টিনে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তুহিন কান্তি দাশ। পাশেই আছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী।

এসজে/সি

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক
সাত কলেজের বৃহস্পতিবারের পরীক্ষাও স্থগিত
ঢাবিতে আইনজীবী সাইফুলের গায়েবানা জানাজা
ফেসবুকে ‘হা হা রিঅ্যাক্ট’ দেওয়ায় ছাত্রদল কর্মীদের পেটাল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ