পদ্মায় ভাঙন: দূরের আত্মীয়রাই যখন শেষ ভরসা
রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের সংলগ্ন পদ্মার ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধের চরধুঞ্চি এলাকায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত রোববার সকাল থেকে ওই এলাকায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয় যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রায় ৫শ’ মিটারের বেশি সিসি ব্লক বাঁধ নদীতে তলিয়ে গেছে। ভাঙনে ওই এলাকায় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
ভাঙনের খবর পেয়ে রোববার রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে চলতি মাসে শহরের গোদার বাজার ও ধুঞ্চি এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আর হুমকির মুখে রয়েছে এ এলাকার তিনটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও মসজিদ এবং শত শত পরিবারের বসত বাড়ি। যেকোনো সময় এগুলোও ভেঙে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
পার ভাঙনে নদীতে চলে যেতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকে তাদের অনেক সাধের স্বপ্নের ঘরবাড়িসহ মূল্যবান সহায় সম্বল ভেঙে দূরের আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য কিবরিয়া বলেন, ভাঙনে অনেক পরিবার এখন ক্ষতিগ্রস্ত। তারা অসহায় হয়ে এখন বাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে তাদের অবশিষ্ট সব কিছু নিয়ে দূরের আত্মীয়ের বাসায় চলে যাচ্ছে।
জেলা সদরের চরধুঞ্চি এলাকার জলিল বলেন, এই এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি মসজিদ, বিদ্যালয়সহ শত শত বাড়িঘর। নদী ভাঙনে এসব এলাকার মানুষ তাদের বাড়িঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। অনেকেই সব আশা বাদ দিয়ে দূরে চলে যাচ্ছে। নদী পাড়ের যাদের জমি অবশিষ্ট আছে এগুলোও যেকোনো সময় তলিয়ে যাবে।
------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : মাগুরায় বজ্রাঘাতে ৪ কৃষক নিহত
------------------------------------------------------------------
জেলা সদরের গোদারবাজার ঘাট, অন্তরমোড়, উড়াকান্দা, মহাদেবপুর, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়ন, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন এলাকায় নদী ভাঙনে অনেকে ক্ষতি হয়েছে এরই মধ্যে। ভাঙনের তীব্রতায় নিঃস্ব হয়ে অনেকেই ভয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ওপরে।
স্থানীয় কালাম বলেন, নদী যেভাবে ভাঙছে এভাবে ভাঙতে থাকলে বাঁধ হুমকিতে পড়বে। বাঁধ যদি ভেঙে যায় তাহলে রাজবাড়ী শহরে পানি ঢুকবে।
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত নদী শাসন না করলে জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে অনেক গ্রাম ও ইউনিয়ন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ খালেক জানান, নদীতে ঘরবাড়ি ভাঙার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত্বনা দেই। কীভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
গেল তিন দিনে চরধুঞ্চি গ্রামের ১৫টি পরিবারের বসতঘর ও অন্যান্য গাছপালা নদীতে ভেঙে পড়লে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, আমরা আমাদের প্লান অনুযায়ী জরুরিভাবে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলে কাজ করেছি, কিন্তু পাড়ের বালু মাটিগুলো নরম হওয়ায় এ অবস্থা হচ্ছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার আরটিভি অনলাইনকে জানান, রাজবাড়ী অংশের ৮০ কিলোমিটার জুরিডিকশন অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে ভাঙন। শুধু জেলা সদরের গোদারবাজার ঘাট এলাকায় সিসি ব্লকসহ প্রায় ৫শ’ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছরের চেয়ে এবারের ভাঙন বেশি।
আরও পড়ুন :
- গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দিয়েছে ভারত, পানিবন্দি ১০ হাজার মানুষ
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণপিটুনিতে প্রাণ গেল যুবকের
এসএস
মন্তব্য করুন