জাজ না থাকলে কার লাভ কার ক্ষতি?
যৌথ প্রযোজনার সিনেমার নামে প্রতারণা হচ্ছে এমন অভিযোগে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলন শুরু করে চলচ্চিত্র পরিবার। মূলত চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘নবাব’ এবং ‘বস টু’ সিনেমায় যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
এরই প্রেক্ষিতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমার জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি হয়েছে। আর নতুন নীতিমালায় কাজ করা কঠিন হবে এমন কথা বলে বাংলাদেশে নিজেদের সব কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে জাজ-কর্ণধার আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে জাজ তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করবে অচিরেই। এখন তাদের কয়েকটি ছবির কাজ চলছে। এসব সিনেমা মুক্তি দেওয়ার পরই বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে ব্যবসা শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ সিনেমার মাধ্যমে প্রযোজনায় আসে জাজ। তখন থেকেই বেশ দাপটের সঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে আসছে এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১০০ সিনেমা হলে নিজেদের প্রোজেক্টর মেশিন বসিয়ে হল মালিকদের জিম্মি করে রেখেছে বলে বহুবার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ ছেড়ে শুধু কলকাতার জন্য সিনেমা বানালে জাজের নিজেদের শিল্পীদের কি হবে? মিমি, নুসরাত, দেব, জিতের রাজ্যে এদেশের অর্থাৎ জাজের শিল্পীরা কলকাতায় কতটা নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এছাড়াও গত বছর ঈদে জাজ ও এসকে মুভিজের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘নবাব’ বাংলাদেশে ব্যবসা সফল হলেও কলকাতায় মাত্র ৪০ লাখ টাকা ব্যবসা করেছে এবং সিনেমাটি চলেনি বলেও সেখানকার স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
অন্যদিকে জাজ যদি একেবারেই বাংলাদেশে ব্যবসা না করে তাহলে প্রতি বছর প্রায় ৮ থেকে ১০টি সিনেমা কম পাবেন হল মালিকরা। হল মালিকদের অভিযোগ ভালো সিনেমার অভাব আছে ইন্ডাস্ট্রিতে। সেক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যদি সিনেমা না বানায় তাহলে সিনেমার সংকট কিছুটা হলেও দেখা দেবে বলছেন অনেকেই।
আবার কেউ কেউ বলছেন, সিনেমা ব্যবসায় জাজের সিন্ডিকেটের জন্য প্রযোজনা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অনেকেই। কারণ জাজ নিজেদের প্রদর্শন মেশিন দিয়ে হল দখল করে রেখেছে। তাই অন্য প্রযোজকদের সিনেমা রিলিজের সময় হল পেতে বেশ বেগ পেতে হতো তাদের। জাজ না থাকলে সেই সংকট কিছুটা হলেও কাটবে বলে মনে করছেন প্রযোজকদের একটা অংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বনামধন্য চিত্রপরিচালক বলেন, জাজ যখন ছিলনা তখন আমরাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বাঁচিয়ে রেখেছি। মাঝে অশ্লীলতার একটা খারাপ সময় গেছে তার জন্য তো আমরা দায়ী নই। তখনকার সরকার চলচ্চিত্রবিমুখ ছিলেন। তাই এসব হয়েছে। সরকার সহযোগিতা করলে আবারও আমাদের শিল্পী-কলাকুশলীর মাধ্যমেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে জাজ মাল্টিমিডিয়া না থাকলে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
প্রতাপশালী এক প্রযোজক বলেন, ভারতের শিল্পীদের নিয়ে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা থেকে বাংলাদেশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর সাফটা চুক্তির মাধ্যমে আনা দেব, জিতের সিনেমাও এদেশের মানুষ দেখছে না। ভারতীয় সিনেমা মুখ থুবরে পড়েছে। যেখানে কলকাতাতেই তাদের সিনেমা ফ্লপ হচ্ছে সেখানে আমাদের দেশের কেন তাদের নিয়ে সিনেমা বানাতে হবে?
এম/পিআর
মন্তব্য করুন