প্রতিবেশীর মাদকের থাবায় বিপদে বাংলাদেশ
প্রতিবেশী দেশগুলোর মাদক সিন্ডিকেটের কারণে দেশের ভেতরে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুই দেশের অনেক নাগরিক মাদক কেনাবেচায় জড়িত। আর বাংলাদেশে ইয়াবা পাঠানোর সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের একটি অংশ ও সীমান্তরক্ষী নাসাকাবাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ আছে।
কুমিল্লায় গোমতী নদী তীরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে-এক স্পটে মাদকের বড় চালান আসবে আগাম খবর পেয়ে অ্যাম্বুস করার জন্য পাঠানো হয় ১০ বর্ডার গার্ডের চৌকস অগ্রবর্তী দলকে।
সেখানে বাংলাদেশ সীমান্তে নদী পারে সন্ধ্যায় পর থেকে ঘাপটি মেরে থাকেন দলের সদস্যরা। সঙ্গে ছিল আরটিভির সংবাদ দল।
মাঘ মাসের তীব্র শীতে টানা ২০ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকেন বিজিবি জওয়ানরা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন কুমিল্লা সীমান্তে এমন পাঁচটি দল সারারাত কাজ করে।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়েছে মাদক: সেতুমন্ত্রী
--------------------------------------------------------
দীর্ঘ অপেক্ষার পর দিনের আলোয় আসে সাফল্য। খবর পেয়ে কুমিল্লার যশপুর বিওপিতে ভারত থেকে আসা ছয় সদস্যের মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের একজনকে গ্রেপ্তার করে ১০ বর্ডার গার্ড।
সিন্ডিকেটটি বাংলাদেশের চোরাকারবারিদের সঙ্গে মিলে মদ থেকে শুরু করে ইয়াবা সবকিছু সরবরাহ করে। সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে ঢুকে নো-ম্যানস্ ল্যান্ড পার হয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় মাদক রেখে যায়। পরে বাংলাদেশি চোরাকারবারিরা সেই মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে। কাজের সুবিধার্থে অনেক চোরাকারবারি আবার নিজেদেরকে বাংলাদেশিদের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে জড়িয়ে নেন।
বিজিবি জোয়ানদের হাতে গ্রেপ্তার ওই ইন্ডিয়ান চোরাকারবারি জানান, মাদক এনে তিনি তার ঘরে রাখেন। সেখান থেকেই মাদক বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া বাংলাদেশে তার মামাসহ অনেক আত্মীয় আছে-যাদের মাধ্যমে তিনি সহজেই মাদক চালান করতে পারেন।
গেলো এক বছরে দেশের বিভিন্ন বিওপি থেকে (গ্রাফিক্স) এক কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ১৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, প্রায় সাড়ে তিন লাখ বোতল ফেনসিডিল, সাড়ে ১৬ হাজার কেজি গাঁজা ও ৪৫ কেজি হেরোইন জব্দ হয়েছে।
তবে মিয়ানমার সরকার ও নাসাকাবাহিনীর অসহযোগিতার কারণে ইয়াবা আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাদক চোরাচালান এখন আর শুধু মিয়ানমার সীমান্তেই সীমাবদ্ধ নয়। তা এখন সাগরে ছড়িয়ে পড়েছে।’
বিজিবি মহাপরিচালক অভিযোগ করে বলেন, ‘মিয়ানমারে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে প্রায় সবাই জড়িত। দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা ইয়াবা ব্যবসা করে থাকে। শুধু তাই নয় মিয়ানমারের আর্মি থেকে শুরু করে সিকিউরিটি ফোর্স, বর্ডার গার্ড ও অন্যান্য ফোর্সেরও অনেক সদস্য এই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই ব্যবসা লাভজনক। তাই ওপার থেকে যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা তা আমরা পুরোপুরি পাইনি। ফলে সীমান্ত গলে বাংলাদেশে মাদক আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না।’
এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাশের দুটি দেশের এখনও প্রায় দেড়শ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত আছে। তাই মাদকবিরোধী অভিযানে সফল হতে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন:
জেবি/জেএইচ
মন্তব্য করুন