পোল্ট্রি শিল্পে চামড়ার বিষাক্ত বর্জ্য ও এন্টিবায়োটিক, ঢুকছে মানবদেহে
দেশে তৈরি এন্টিবায়োটিকের ৭০ ভাগই ব্যবহার হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্পে। আবার উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এখনও চামড়ার বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোল্ট্রি খাবার। এতে হুমকির মুখে মানবদেহ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা।
আশির দশকে শুরু। বিকাশ ঘটেছে, পুরো নব্বই দশকজুড়ে। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা। যদিও জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে অগোছালো হয়েছে শিল্পটি। দানা বেঁধেছে অসাধু চক্র। পরিণত হয়েছে ওষুধ নির্ভর শিল্পে।
সম্প্রতি যে বিষয়টি গবেষকদের দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো মুরগিতে অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার। বাচ্চা খামারে তোলার পর থেকে বাজারে বিক্রি করার আগ পর্যন্ত মুরগিকে সুস্থ রাখতে নির্বিচারে প্রয়োগ করা হচ্ছে এন্টিবায়োটিক।
পোল্ট্রি খামারিরা বলছেন, মুরগির বাচ্চা ওঠানোর পর থেকে শেষ সময় পর্যন্ত অতি মাত্রায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া বাচ্চা বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের হাতে অন্য কোনও উপায় থাকে না। আর এটা করতে গিয়ে বড় অংকের অর্থও চলে যায়।
অথচ নিয়ম হচ্ছে বাজারে মুরগি পাঠানোর তিনদিন আগের থেকে কোনও ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মুরগিকে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাতে বিক্রির আগ মূহূর্তেও খাওয়ানো হয় এন্টিবায়োটিক!
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর তার ৩০ শতাংশ মানুষ ভোগ করে। আর ৭০ শতাংশ এগ্রিকালচার ও পোল্ট্রি ফার্মে ব্যবহৃত হয়। রক্তে প্রবাহিত হলে এন্টিবায়োটিকের ক্ষমতা থাকবে। তাই সেটা কম হোক আর বেশি হোক। সেটা শরীরের প্রতিটি টিস্যুতেও যেতে পারে।
তিনি বলেন, যদি বিনা প্রয়োজনে শরীরে এই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, তবে তা ক্রিয়া নয়, শরীরে বিক্রিয়া করবে।
এদিকে আদালতের নিষেধ থাকলেও বন্ধ হয়নি চামড়ার বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে পোল্ট্রির খাবার তৈরি।
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : মহাসড়কে ফিটনেস গাড়ি ও লাইসেন্সের বড় সংকট
-------------------------------------------------------
এ প্রসঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, পোল্ট্রির খাবারে যাতে চামড়ার বর্জ্য ব্যবহার না হয়- সেজন্য আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে আমরা হঠাৎ দেখেছি, সাভারে এই বর্জ্য পোল্ট্রির খাবারের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে কিছু অভিযানও পরিচালনা করেছি। জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. আবুল হাসানের এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে চোখ কপালে উঠে আসার মতো ফলাফল।
তিনি বলেন, আমাদের বডি প্রতি কেজিতে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ক্রোমিয়াম ধারণ করতে পারে। সেখানে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু আমরা দেখেছি, এই মাংস খেয়ে প্রতি কেজি থেকে ৩৪৮ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম শরীরে জমা হয়।
“মাত্রাতিরিক্ত এই ক্রোমিয়াম আমাদের শরীরে কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যেটা পরে ক্যানসার পর্যন্ত ঘটাতে পারে।”
যদিও এসব বিষয় মানতে রাজি নন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল- বিপিআইসিসির সভাপতি মশিউর রহমান।
সংবিধান মানুষকে নিরাপদ খাদ্যের অধিকার দিলেও তা সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর একটাই অজুহাত- লোকবল সংকট। সময় এসেছে, সব অজুহাত ঝেড়ে ফেলে কাজে নামার। জাতিকে সুস্থ-সবল ভবিষ্যত প্রজন্ম উপহার দেয়ার।
আরও পড়ুন :
এসআর
মন্তব্য করুন