কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব হারালেন সু চি
রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত নৃশংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব হারালেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। এই সম্মাননা প্রত্যাহারের ওপর কানাডার পার্লামেন্টে ভোটাভুটির পর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খবর পার্সটুডের।
কানাডার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ মঙ্গলবার সর্বসম্মতিক্রমে মিয়ানমারের নেত্রীর সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলে ভোট দেন। গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সেও একই ধরনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
এর আগে আগস্ট মাসের শুরুর দিকে কানাডার আইনপ্রণেতারা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যা, নির্যাতনকে সর্বসম্মতভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তারা একটি প্রস্তাবও পাস করেন। এরমধ্য দিয়ে মিয়ানমারে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের তথ্য-উপাত্তকে অনুমোদন দেয় হাউস অব কমন্স।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যার উদ্দেশ্যে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে। আইন প্রয়োগের নামে ভয়ঙ্কর ওই অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করারও সুপারিশ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন।
সেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির বেসামরিক সরকার বিদ্বেষমূলক প্রচারকে উসকে দিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করেছে এবং সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এরমধ্যে দিয়ে মিয়ানমার সরকারও নৃশংসতায় ভূমিকা রেখেছে।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন মনে করে, নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া সু চি বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় তার নৈতিক কর্তৃত্ব ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ বিষয়ে নোবেল ফাউন্ডেশনের প্রধান লারস হেইকেনস্টেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, মিয়ানমারে সু চি যা করছেন তা যে বেশ প্রশ্নবিদ্ধ, তা আমরা দেখছি। আমরা মানবাধিকারের পক্ষে, এটা আমাদের অন্যতম প্রধান মূল্যবোধ। অবশ্যই বিস্তৃত অর্থে তিনি এর (রাখাইনে দমনপীড়ন) জন্য দায়ী, যা খুবই দুঃখজনক।
অং সান সু চির ভূমিকা কিছু ক্ষেত্রে ‘দুঃখজনক’ হলেও তার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহার করা হবে না বলেও জানান তিনি।
সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান সু চি। মিয়ানমার বেসামরিক সরকার ব্যবস্থায় ফিরলে ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতে সু চি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর হন। মিয়ানমারের বেসামরিক প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন সু চিরই হাতে। তবে সাংবিধানিকভাবে সেনাবাহিনী এখনও বিপুল ক্ষমতাধর।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
উল্লেখ্য, সু চি ছাড়াও নেলসন ম্যান্ডেলা, দালাইলামা ও মালালা ইউসুফজাইসহ আরও পাঁচ ব্যক্তিকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে কানাডা সরকার।
আরও পড়ুন :
- যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া দুই সপ্তাহও টিকবে না সৌদি রাজতন্ত্র: ট্রাম্প
- রসায়নে নোবেল পেলেন আর্নল্ড, স্মিথ ও উইন্টার
এ
মন্তব্য করুন