শতকোটি ডলারে গিয়ে ঠেকলো মেগা মিলিয়ন্স জ্যাকপট
বিশাল অংকের জ্যাকপটের জন্য বিখ্যাত মেগা মিলিয়ন্স লটারি। আর এই লটারির জ্যাকপটের পুরস্কারের অর্থ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ড্রয়ের দ্বিতীয় দিন মেগা মিলিয়ন্স ডলারের লটারি জ্যাকপট শতকোটি ডলার ছুঁয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লটারির পুরস্কার, আর গেল তিন বছরে শীর্ষ ১০টি পুরস্কার মু্ল্যের পাঁচটির একটি। খবর বার্তা সংস্থা এপি’র।
লটারি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, জ্যাকপট জেতার সুযোগ কমাতে তারা ‘অডস’ পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। এখন শীর্ষ পুরস্কার পাওয়ার আরও বেশি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
কেন জ্যাকপটের নম্বর কমানো হলো?
কাগজে-কলমে বড় জ্যাকপট, বেশি মানুষকে টানার জন্য এমনটা করা হয়েছে। এতে করে মেগা মিলিয়ন্স বা পাওয়ারবল টিকিটের জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে। যত বেশি টিকিট বিক্রি হবে জ্যাকপটে অর্থ তত বাড়বে, এতে আরও মানুষ আগ্রহী হবে।
জ্যাকপট বিজয়ীর নম্বর পরিবর্তনের আগে এই থিওরি পাওয়ারবলের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। ২০১৫ সালের অক্টোবরে পাওয়ারবলে সম্ভাব্য বিজয়ীর নম্বর কম্বিনেশন পরিবর্তন করা হয়। এর ফলে পাওয়ারবল লটারি জয়ের অনুপাত নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়। যেখানে আগে প্রতি ১৭৫ মিলিয়নে একজন পাওয়ারবল লটারি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, নম্বর পরিবর্তনের ফলে সেটির অনুপাত দাঁড়ায় প্রতি ২৯২.২ মিলিয়নে একজন। কর্মকর্তারা ছোট ছোট লটারি জেতার সুযোগও বৃদ্ধি করেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয় মেগা মিলিয়ন্স লটারির ক্ষেত্রে। এর ফলে প্রতি ২৫৯ মিলিয়নে একজন বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায় ৩০২.৫ মিলিয়নে একজন।
এতে কোনও পরিবর্তন এসেছে?
সম্ভাব্য বিজয়ী নম্বর পরিবর্তন করার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মেগা মিলিয়ন্স ও পাওয়ারবলের বিক্রি বেড়ে গেছে। কিন্তু যেভাবে দিন দিন মেগা মিলিয়ন্সের পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ বাড়ছে, তাতে পাওয়ারবলের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে। কেননা বর্তমানে পাওয়ারবল লটারির মূল্য যেখানে ৪৩০ মিলিয়ন ডলার, সেখানে মেগা মিলিয়ন্স লটারির মূল্য প্রায় ১০০ কোটি ডলার। তাই পাওয়ারবল লটারির টিকিট কেনার চেয়ে মেগা মিলিয়ন্স লটারির পেছনে ছোটাটাই অনেকের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
জ্যাকপটের পরিমাণ বেড়ে গেলে টিকিট বিক্রির হার কেমন?
যখন লটারির পুরস্কারমূল্য বেড়ে যায় তখন মুহূর্তেই টিকিট বিক্রি সব কিছু ছাপিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ ক্যালিফোর্নিয়া ড্র’র আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম ভাগে ৫৭ লাখ ডলারের মেগা মিলিয়ন্স টিকিট বিক্রি হয়। আর লাঞ্চের সময় বিক্রি এতোটাই বেড়ে যায় যে, তখন প্রতি সেকেন্ডে ২০০টি করে টিকিট বিক্রি হয়।
তবে যদি কেউ জ্যাকপট পেয়ে যায়, তাহলে সে কতটুকু অর্থ পাবে?
যদি কেউ শুক্রবারের ড্রয়ে বিজয়ী হয়, তবুও সে ১০০ কোটি ডলার পুরস্কার পাবেন না। কারণ বিজয়ী সবাই নগদ অর্থের অপশন বেছে নেয়, লটারির অর্থমূল্য শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ছিল প্রায় ৫৪৮ মিলিয়ন ডলার। তবে ফেডারেল ট্যাক্স, অঙ্গরাজ্যের আর্থিক কর্তন দিয়ে একজন বিজয়ী আসলে নির্ধারিত পুরস্কারের অর্ধেকটাই পান। কিন্তু যারা একবারে পুরো অর্থ নিতে চান না, তারা বাৎসরিক ভিত্তিতে এই পুরস্কারের অর্থ নিতে পারবেন। সেক্ষত্রে ২৯ বছর ধরে এই অর্থ পরিশোধ করা হবে এবং সঙ্গে দিতে হবে বড়সড় ট্যাক্স বিলও।
তাহলে কী কারও টিকিট ধরা উচিত নয়?
কেউ যদি যৌক্তিকভাবে চিন্তা করেন তাহলে তার এক বা ১০০টি টিকিট দিয়েও জ্যাকপট জেতার কোনও সুযোগ নেই। বরং জেতা না জেতার অনুপাতের মধ্য বেশ ফারাক রয়েছে।
কিন্তু সেই ফারাকটা আসলে কতটুকু? কানিকটিকাটের কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালযের গণিতের একজন অধ্যাপক কর্নেলিয়াস নেলান বলেছেন, এটা অনেকটা একটি রোলিং ডাই ছুড়ে দিয়ে টানা ১১ বার এক সংখ্যা পাওয়ার মতোই দুঃসাধ্য ব্যাপার।
তাই অধিকাংশ মানুষই জ্যাকপট পাওয়ার আশা করে না। বরং মনে করে দুই ডলার দিয়ে লটারি জেতা স্বপ্নের মতো।
উল্লেখ্য, আন্তঃরাষ্ট্রীয় মেগামিলিয়নস লটারির ড্র সপ্তাহে দুই দিন মঙ্গলবার এবং শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন :
এ/ এমকে
মন্তব্য করুন