ভোটের হাওয়া: লক্ষ্মীপুর-১ ও ২ আসন
শরিক দল নিয়ে টেনশনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি (ভিডিও)
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী আমেজে ভাসছে লক্ষ্মীপুর জেলা। জেলার ১ এবং ২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমেছেন নির্বাচনী প্রচারণায়।
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে তৎপর থাকলেও পিছিয়ে নেই বিএনপিও। এলডিপি ও তরিকত ফেডারেশনের নেতারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ জোট থেকে মনোনয়ন পেতে জোটের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। বড় দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পথের কাঁটা শরিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই মাঠ গরমের চেষ্টা করছেন। তবে ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই শরিকদের নিয়ে উভয় জোটে টেনশন বাড়ছে।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনটি থেকে ১৯৭০ সালের পর কোনও নির্বাচনই জয়ী হতে পারেননি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যার প্রধান কারণ হচ্ছে, দলীয় কোন্দল ও প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা না থাকায়। অবশ্য এবার যে কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান অংশগ্রহণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও গরিব অসহায়দের দান-অনুদানের মাধ্যমে অর্জন করেছেন জনপ্রিয়তা। এছাড়া সাধারণ ভোটারদের কাছে গিয়ে তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। তবে দূর হয়নি এখনো দলীয় কোন্দল।
একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে কাজ করে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম। তিনি এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন।
সফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাপক উন্নয়নের কারণে আমাদের সরকারের জনসমর্থন বেড়েছে। এখানে আমরা সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আগামী নির্বাচনে এই আসনটি থেকে বিপুল ভোটে নৌকা প্রতীক জয়লাভ করবে।
এ আসনটিতে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিক মাহমুদ পিন্টু বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। নৌকাকে বিজয় করতে নির্বাচনী এলাকায় জনগণের পাশে থেকে কাজ করছি। আশা করছি আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাবো।
তরিকত ফেডারেশনের নেতা ও বর্তমান এমপি এম এ আউয়াল বলেন, এই আসনে আমার দল সু-সংগঠিত। আগামী দিনে আমার ইমেজ ও দলের জনপ্রিয়তায় আমাকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।
------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ঢাবিতে কোটা আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি মিছিল
------------------------------------------------------------------
রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ও নৌকার বিজয়ে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. আনোয়ার খাঁন। আগামী সংসদ নির্বাচনে ড. আনোয়ার খানকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিবো।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এমএ মমিন পাটোয়ারী
এদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ কয়েকটি উৎসব ছাড়া তৃণমূল কর্মীরা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীদের দেখা পান না। তাই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এই আসনটি হারানোর ভয় করছে কর্মীরা। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়া যাবে।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য মো. ঈমাম হোসেন বলেন, এটি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে রয়েছে বিএনপির শক্তিশালী সংগঠন। এ অঞ্চলে যত উন্নয়ন হয়েছে তা কেবল বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনই হয়েছে। এজন্য এ অঞ্চলের মানুষ বিএনপিকেই ভোট দিবে। আমি দীর্ঘদিন দলকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তাই আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।
এছাড়া এই আসনে বিএনপি থেকে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার হারুনুর রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইমাম হোসেন মনোনয়ন চাইছেন।
এদিকে, সদর উপজেলার একাংশ এবং রায়পুর উপজেলা নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনেও চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুইবার এ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ায় এখানে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে দলটি। তবে, গেল নির্বাচনে মহাজোট থেকে টিকিট পেয়ে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ আসনের এমপি হওয়ায় কিছুটা শঙ্কিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এইবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে রাজি নয়। দলের নেতাকর্মীরাও চায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই মনোনয়ন পাক।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. এহসানুল কবির জগলুল বলেন, দল থেকে মনোনয়ন পেলে তিনি এই আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবেন। এছাড়াও তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি ও বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দুর করবেন।
রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন বলেন, শিল্পপতি শহিদুল ইসলাম পাপুলের নেতৃত্বে ও অর্থায়নে সুসংগঠিত রয়েছে উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবে নৌকা মার্কা।
এ আসনে আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন তারা হলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি মো. হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা যুবলীগের সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন সভা সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভুঁইয়া বলেন, লক্ষ্মীপুরের সব কয়টি আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জয়লাভ করবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে। তবে পার্লামেন্ট ভেঙে নির্বাচনকালীন গ্রহণযোগ্য একটি সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।
------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : সরকারকে নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধ্য করতে হবে: মওদুদ
------------------------------------------------------------------
বিএনপি নেতা কর্নেল (অব:) আবদুল মজিদ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। তাই দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আগামী নির্বাচনে আসনটি খালেদা জিয়াকে উপহার দিবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি নির্বাচিত হলে দলকে সংগঠিত করার জন্যও কাজ করবেন বলে জানান।
রায়পুর পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম জিলানী বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। আর এখন উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ লুটপাটে ব্যস্ত। বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ঘরোয়া অনুষ্ঠানগুলোও করতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
নিজেদের বিজয় নিশ্চিত দাবি করে তিনি আরও বলেন, আসনটি বিএনপির ঘাটি হিসাবে পরিচিত, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা জামানত ফেরত পাওয়ার মতও ভোট পাবে না।
জোট ইস্যুতে বর্তমানে এখানে সংসদ সদস্য রয়েছেন জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি ও এরশাদের উপদেষ্টা সদস্য মোহাম্মদ নোমান। অভিযোগ রয়েছে তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দলকে সুসংগঠিত না করেই নিজের আখের গোছানোর কাজেই রয়েছেন ব্যস্ত। এজন্য নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে এ উপজেলা জাতীয় পার্টি।
কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির নির্বাহী সদস্য ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ ফায়েজ উল্লাহ শিপন বলেন, জেলার কয়েকজন নেতার কারণেই এখানে জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত নয়। তবে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং আগামী নির্বাচনে লাঙল মার্কাকে জয়ী করার জন্য দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। জাতীয় পার্টির গুরুত্ব তুলে ধরছি।
এসএস
মন্তব্য করুন