ভোটের হাওয়া: চট্টগ্রাম-১৫
বিভক্তি-কোন্দলে বেকায়দায় বড় দুই দল
চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সাতজন, বিএনপিতে চার ও জামায়াতের দুজন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর ফল বলছে, এখানে বিএনপি ও জামায়াত জোট ভোটের হিসেবে এগিয়ে আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সেই অবস্থা আর নেই। যদিও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে রয়েছে বিভক্তি। বিএনপিতেও একই অবস্থা।
সাতকানিয়ার ১১টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও লোহাগাড়া উপজেলা নিয়ে চট্টগ্রাম-১৫ আসনটি গঠিত। এ আসনে ১০টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুইবার, বিএনপি তিনবার, জামায়াত তিনবার ও জাতীয় পার্টি দুইবার জয়লাভ করেছে।
দশম সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৩ সালের পর আবার আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য হন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে অন্তত সাত নেতা মনোনয়ন চাইতে পারেন।
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : সমাবেশ ঘিরে গ্রেপ্তার বিএনপির ৪ শতাধিক নেতাকর্মীর তালিকা প্রকাশ
-------------------------------------------------------
তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দলের সাতকানিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি ব্যবসায়ী এম এ মোতালেব, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনউদ্দিন হাসান চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান।
এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতারা পৃথক কর্মসূচী পালন করে আসছেন। এর প্রভাব পড়েছে তৃণমূল পর্যায়ে। তবে জানা যায়, আওয়ামী লীগর কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে রয়েছে সবার ভালো সম্পর্ক।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন উপায়ে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন প্রার্থীরা
এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ৭৩’ সালের পর আমি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছি। এর আগে সাতকানিয়ায়-লোহাগাড়ায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। আমি নির্বাচিত হয়ে অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। আমি আমার নিজস্ব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও প্রচুর উন্নয়ন কাজ করছি। এই উন্নয়নের কারণে আমি মনোনয়নের হকদার। আমি শতভাগ আশাবাদী উন্নয়নের কারণে আমি মনোনয়ন পাবো।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগেও দুইবার মনোনয়ন চেয়েছিলাম। সেসময় আমাকে মনোনয়ন না দিলেও আমি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। এই মুহূর্তে এসে এবারও আমি মনোনয়ন চাচ্ছি। আমি ব্যক্তির রাজনীতির চেয়ে দলের রাজনীতি বিশ্বাস করি। আশা করি আমি এবার মনোনয়ন পাবো। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে যেন বেশি করে এলাকার জনগণের সেবা করতে পারি এ কারণে জনপ্রতিনিধি হতে চাচ্ছি। যদি দল ভালো মনে করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো মনে করেন তাহলে মনোনয়ন আমি পাবো।
বিএনপিও অনেকটা অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে এ সংসদীয় এলাকায়। চার খণ্ডে বিভক্ত দলটির রাজনীতি। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের সঙ্গেও রয়েছে দলটির দূরত্ব। তারপরও আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বিএনপি থেকে মনোনয়েন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ জেলা শাখার জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাতকানিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, দক্ষিণ জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক নাজমুল মোস্তফা আমিন ও যুগ্ম সম্পাদক আবদুল গফ্ফার চৌধুরী।
জামায়াতের সঙ্গে জোটগত নির্বাচন হলে আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি করে আমরা নির্বাচন করবো। আমাকে দল থেকে বলা হয়েছে দলকে গুছানোর জন্য। সে কারণে নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাকে এই আসনটি থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে দলকে আসনটি উপহার দিতে পারবো।
সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে অপেক্ষায় আছি। জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে শতভাগ নিশ্চিত আমরা জয়লাভ করবো।
অন্যদিকে জামায়াতের দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক দুই সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরীর মধ্যেও রয়েছে দ্বন্দ্ব। তবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই জোটগতভাবে নির্বাচন কোন দিকে মোড় নেয় সেপর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসীকে।
আরও পড়ুন :
এসএস
মন্তব্য করুন