কেন বাতিল হতে পারে বিএনপিসহ ২১ দলের নিবন্ধন?
বাতিল হতে পারে বিএনপিসহ দেশের ২১টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই শঙ্কা বিরাজ করছে দলগুলোর মধ্যে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনীতির অঙ্গনে। নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ কমিশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরপর দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়বে। নিবন্ধন বাতিল হবে কি না, সেটি একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এর ক'দিন পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বগুড়ায় এক আলোচনা সভায় বলেন, পরপর দুবার নির্বাচনে না এলে বিএনপির নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়বে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২১টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ঝুঁকিতে আছে। এগুলো হলো, বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি।
কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু করে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৩৯টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৮টি ও দশম সংসদ নির্বাচনে ১২টি (১টি নতুনসহ) দল অংশ নেয়। পরে আরও ৪টি দল দশম সংসদের নানা উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ বাকি ২১টি দলকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের নিবন্ধন বাতিলসংক্রান্ত ধারার কথা মাথায় রাখতে হবে।
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : বিএনপির ৭ দফা দাবি অবাস্তব, সংবিধান বিরোধীও : কাদের
-------------------------------------------------------
নির্বাচনী আইন আরপিওর ৯০ (এইচ) (ই) ধারায় বলা হয়েছে, ৫ কারণে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ইসি বাতিল করতে পারবে। এর মধ্যে আছে ১. যদি দলটি নিজেই নিজের বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ২. সরকার যদি কোনও দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ৩. কোনও নিবন্ধিত দল যদি পরপর তিন বছর নির্বাচন কমিশনের চাহিদামতো তথ্য দিতে না পারে। ৪.৯০ (বি) অনুযায়ী নিবন্ধন পাওয়ার ও রাখার শর্ত ভঙ্গ করে। এবং ৫. কোনো দল যদি পরপর দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়। তবে এই আইন অনুযায়ী দুবার অংশ না নেয়া দলের নিবন্ধন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ হবে না। কমিশন দলকে শুনানির জন্য সুযোগ দেবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, টানা দুবার সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। কোনও রাজনৈতিক দল ১টি আসনেও নির্বাচন না করলে নিবন্ধন আইন অনুযায়ী তাদের নিবন্ধন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তবে আরও অনেক ক্রাইটেরিয়া থেকে যায়। কতগুলো দলের নিবন্ধন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তার পরিসংখ্যান করা হয়নি। তিনি জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন না হলে বিদ্যমান আইনে নির্বাচন করা হবে।
তবে ঝুঁকির তালিকায় থাকা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আরটিভি অনলাইনকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ অনুচ্ছেদের এইচ (১) ধারাটা একেবারেই অগণতান্ত্রিক। শুরু থেকেই আমরা তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি। এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কমিশন কখনই এভাবে হুমকি দিয়ে কথা বলতে পারে না। সিপিবির কাছে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়াতে সিপিবির রাজনীতি সীমাবদ্ধ নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, কমিশন মূলত বিএনপিকে ভয় দেখাচ্ছে। যাতে বিএনপি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এই কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। সিইসি ও সচিবের বক্তব্য প্রমাণ করে কমিশন সরকারের হয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রোববারের জনসভায় আমরা স্পষ্টভাবেই জানিয়েছি, তফসিল ঘোষণার আগেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। লেভেল ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন করা সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা।
আরও পড়ুন :
- সমাবেশ ঘিরে গ্রেপ্তার বিএনপির ৪ শতাধিক নেতাকর্মীর তালিকা প্রকাশ
- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যা বললেন জয়
এসজে/জেএইচ
মন্তব্য করুন