১০ বছর আর ৩০২ ম্যাচ পর!
গত রাতে বার্সা কোচ ভালভার্দে নতুন এক ঘটনার জন্ম দিলেন ম্যাচের ৫৯ মিনিটে। যা মনে করিয়ে দিলো বার্সার সাবেক কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের সময়কে। রাইকার্ডের সময়ের সেই ঘটনায় হয়তো ধুলোবালি পড়ে গিয়েছিল। গত রাতে ধুলোবালি ঝেড়ে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিলেন সেই সময়টুকুকে।
আরও পড়ুন-
সাধারণত ম্যাচের মধ্য সময়ে কোনো কোচই তাদের মূল খেলোয়াড়কে সহজে বদলি করেন না অথবা করতে চান না। কারণ প্রতিটি কোচই তাদের মূল খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে আক্রমণভাগ সাজিয়ে রাখে। তাই মূল খেলোয়াড়কে তুলে নিয়ে ম্যাচে রিস্ক নিতে চান না।
কিন্তু গত রাতে ম্যাচের ৫৯ মিনিটের সময় লিওনেল মেসিকে তুলে নিয়ে উসমানে দেম্বেলেকে নামিয়ে দিলেন কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে। কোচের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে খুশি মনেই বেরিয়ে গেলেন মেসি। মাঠ ছাড়লেন সমর্থকদের অভিবাদনের জবাব দিতে দিতে। মেসি হয়তো খুশি মনেই মাঠ ছেড়েছেন। তবে বার্সেলোনার সমর্থকদের জন্য এই দৃশ্য দেখাটা ছিল কঠিন। অপরিচিতও ঠেকছিল হয়তো!
সর্বশেষ কবে সুস্থ মেসিকে ম্যাচের ৬০ মিনিটের আগেই মাঠ ছাড়তে দেখেছেন, সেই দৃশ্য যে ভুলেই গিয়েছিলেন তারা! ভুলে যাওয়ারই কথা। সর্বশেষ এমন ঘটনা যে ঘটেছিল সেই ২০০৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচে। বার্সার তৎকালীন কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড ইচ্ছে করেই মেসিকে তুলে নিয়েছিলেন ম্যাচের ৫১ মিনিটে।
সেই ঘটনার পর কেটে গেছে ১০ বছরেরও বেশি সময়। কেটে গেছে ৩০২টি ম্যাচ। মেসিকে হয়তো কখনো সখনো তুলে নেয়া হয়। তবে সেটা একেবারেই ম্যাচের শেষ দিকে। কিন্তু ম্যাচের বয়স ৬০ মিনিট পেরোনোর আগেই সুস্থ মেসিকে তুলে নেয়ার বিলাসিতা বার্সেলোনার কোনো কোচই এরপর আর দেখাননি। হ্যা, মেসিকে হয়তো কখনো সখনো ম্যাচের শুরুর দিকেও উঠে যেতে হয়েছে। তবে সেটা মারাত্মক কোন চোট পেয়ে বা অসুস্থতার কারণে বাধ্য হয়ে।
বার্সেলোনার হয়ে খেলতে নেমে সুস্থ মেসি ৬০ মিনিটের আগেই মাঠ ছাড়ছেন, ২০০৭ সালের ওই ম্যাচের পর এমন ঘটনা গতকাল বৃহস্পতিবারই প্রথম ঘটল। মেসিকে তুলে নিয়ে ধুলোর আস্তরণ জমা রাইকার্ডের ঘটনাটিকে মনে করিয়ে দিলেন ভালভার্দে।
শুধু মেসির উঠে যাওয়াই নয়। কাকতালীয়ভাবে ম্যাচ দুটোর মধ্যে মিল আছে আরও একটি। ২০০৭ সালে লেভান্তের বিপক্ষে সেই ম্যাচে মেসি উঠে যাওয়ার সময় বার্সেলোনা এগিয়ে ছিল ৪-০ গোলে। কালও তাই। মেসি বেরিয়ে যাওয়ার সময় বার্সেলোনা এগিয়ে ছিল ৪-০ গোলে।
পার্থক্য শুধু এই, লেভান্তের বিপক্ষে সেই ম্যাচে দলের ৪ গোলের মধ্যে ১টি গোল করেছিলেন মেসি। গতকাল বৃহস্পতিবার সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে কোপা ডেল রের ম্যাচটিতে তিনি নিজে ২ গোল করেছেন। সতীর্থ জর্দি আলবাকে দিয়ে করিয়েছেন আরেকটি।
সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে কোপা ডেল রের প্রথম লেগে মেসি-সুয়ারেজদের ছাড়াই নেমেছিল বার্সেলোনা। ফল, মেসিবিহিন বার্সাকে ১-১ গোলে রুখে দেয় সেল্টা ভিগো।
শুধু তাই নয়, লিগ ম্যাচেও বার্সেলোনাকে ড্র হতাশায় পুড়িয়েছিল সেল্টা ভিগো। কদিন আগে সেল্টা ভিগো রিয়াল মাদ্রিদকেও ড্রয়ের তিতো স্বাদ দিয়েছে। বার্সা কোচের ভয় ছিল আরো একটি। আগের রাতে দ্বিতীয় সারির রিয়াল মাদ্রিদকে রুখে দেয় নুমানসিয়ার মতো পুঁচকে দল।
বৃহস্পতিবার বার্সা কোচ তাই কোনো ঝুঁকি নেননি। কোপা ডেল রের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে পূর্ণ শক্তির দলই নামিয়ে দেন মাঠে। ফলও পেয়ে যায় দ্রুতই। মেসি জাদুতে ১৫ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। প্রথমার্ধেই পেয়ে যায় ৪-০ গোলের লিড।
জয় নিশ্চিত যখন হয়েই গেছে, গোল-মেশিন মেসিকে ‘সেভ’ করাই তো ভালো। ৫৯ মিনিটে তাই মেসিকে তুলে নেন কোচ ভালভার্দে।মেসি উঠে যাওয়ার পরও একটা গোল করেছে বার্সা। শেষ পর্যন্ত মাঠ ছেড়েছে ৫-০ গোলের জয় নিয়ে। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-১ গোলের অগ্রগামিতায় শেষ আটও নিশ্চিত করে বার্সা।
আরও পড়ুন-
এএ
মন্তব্য করুন