রোববার, ১৪ মে ২০১৭ , ১১:২৬ পিএম
শুল্ক ও কর ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধানে আপন জুয়েলার্সের ৫ শাখায় অভিযান চালিয়ে ২টি শাখা সিলগালা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। পাশাপাশি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের কালো টাকা অর্জন ও অর্থ পাচারের তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। এবিষয়টি তদন্তে ১৭ মে দিলদার আহমেদকে তলব করেছে অধিদপ্তর।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রোববার সকাল থেকে আপন জুয়েলার্সের রাজধানীর গুলশান, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ারের ৫টি শোরুমে শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান চালায়। এখানে কালো টাকা ও অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া ১০ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে আপন জুয়েলার্সের সীমান্ত স্কয়ার শাখা ও সকালে গুলশানের সুবাস্ত টাওয়ারে আরেকটি শোরুমে সীলগালা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ রয়েছে বহুল আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা চাপা দিতে বিপুল অর্থ খরচের চেষ্টা হয়েছে। এই অর্থের উৎস ‘ডার্টি মানি’ কি না, তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অস্বচ্ছ কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই দু’জনের পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপন জুয়েলার্সের ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়েছে। অস্বচ্ছতা পাওয়া গেলে দিলদার ও সাফাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শুল্ক গোয়েন্দা জানান, অভিযানে শুল্ক বিভাগ আপন জুয়েলার্সের নথিপত্রের সঙ্গে শাখার স্বর্ণের পরিমাণ মিলিয়ে দেখেন। অভিযানে স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের বৈধ উৎস ও পরিশোধেযোগ্য শুল্ক-করাদি অনুসন্ধান করেন তারা।
এর আগে গেল কয়েকদিন শুল্ক গোয়েন্দারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাদের আর্থিক লেনদেনের যাবতীয় তথ্য তলব করে।
অভিযানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ ভ্যাটের কর্মকর্তা ও র্যাবের কর্মকর্তারা ছিলেন।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে পক্ষ থেকে জানানো হয়-আজকের (রোববার) ৫টি শাখার ৪টিতে ইনভেন্ট্রিতে মোট ২৮৬ কেজি স্বর্ণালংকার ও ৬১ গ্রাম ডায়মন্ড পাওয়া গেছে। স্বর্ণের মোট মূল্য প্রায় ৮০.২৩ কোটি টাকা এবং ডায়মন্ডের মোট মূল্য প্রায় ৫.১৫ কোটি টাকা। সর্বমোট স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের মূল্য প্রায় ৮৫.৩৮ কোটি টাকা।
এরমধ্যে গুলশানের সুবাস্ত টাওয়ারের শাখাটি বন্ধ থাকায় তা সীলগালা করা হয়।
এ স্বর্ণ ও ডায়মন্ড সাময়িকভাবে আটক করে শুল্ক আইনের বিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানসমূহের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এখন এসব মূল্যবান পণ্যের কাগজ-পত্রাদি গভীরভাবে যাচাই করা হবে। এই অনুসন্ধানে কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হলে এই প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও মানিলন্ডারিং এর অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে, হোটেল রেইন ট্রি’র হোটেলের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এই প্রতিষ্ঠান ক্রেতার নিকট হতে ৮.৩৭ লাখ টাকা আদায় করেছে এবং এই টাকা সরকারি টাকা। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ সরকারি খাতে জমা দিয়েছ মাত্র ৯৩২৬/-। এক্ষেত্রে এই হোটেলের মালিক ৮.২৭ লক্ষ টাকা ‘আত্মসাত’ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান। এক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ অনুসারে মামলা দায়ের করা হবে।
গেলো ২৮ মার্চ সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন ওই দুই তরুণী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত, নাঈম ও তার সঙ্গীরা। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে। মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফকে গেলো বৃহস্পতিবার সিলেটে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এমসি/জেএইচ