শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৪ , ০৩:৪১ পিএম
কারওয়ান বাজার এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখানকার পাইকারি মার্কেট আমিনবাজারে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর দ্রুতই কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিকভাবে কারওয়ান বাজারের পরিত্যক্ত ঘোষিত কাঁচামাল আড়ত ভবনের ১৭৬টি এবং এর দুই পাশে টিনের ছাউনিতে থাকা অস্থায়ী কাঁচাবাজারের আরও ১৮০টি দোকান রাজধানীর গাবতলী এলাকায় আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তর করা হবে।
ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে, কারওয়ান বাজারের তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীদের আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে দোকানের বরাদ্দপত্র দেওয়া হবে। এরপর তাদের নিজ দায়িত্বে দোকানের মালপত্র স্থানান্তর করতে হবে। না হলে স্থানান্তরে বাধ্য করা হবে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে যাত্রাবাড়ীতে সরানোর কথা বলা হয়েছিল। হঠাৎ করে গাবতলীতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ সেখানকার পরিবেশ খুবই সংকীর্ণ। কারওয়ান বাজারের চারদিকে সড়ক। সারা দেশ থেকে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ ট্রাক কাঁচামাল নিয়ে এখানে ঢুকতে পারে। কিন্তু আমিনবাজারে প্রস্তাবিত পাইকারি বাজারে একসঙ্গে এত ট্রাক প্রবেশ করে অল্প সময়ের মধ্যে মাল খালাস করে বেরিয়ে যেতে পারবে না। ফলে নষ্ট হবে কাঁচামাল, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ান বাজার স্থানান্তর কমিটির সদস্যসচিব ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে তো ব্যবসায়ীদের আর উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। সব সুবিধা নিশ্চিত করেই ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করা হচ্ছে। তাই আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে না যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
তবে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেট ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়েছে। অথচ সেই আমিনবাজারে কোনো স্থাপনাই নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সবজির পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা মার্কেট চাই। যানজটের কথা বলা হচ্ছে। কারওয়ান বাজার থেকে আমাদের মার্কেট সরলেই যে ঢাকা শহরের যানজট কমবে, এমন কোনো তথ্য নেই।
এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, বাইরে মিরপুর শাহ আলী ও দিয়াবাড়ি বেড়িবাঁধে কাঁচামালের আড়ত রয়েছে। এসব ব্যক্তিমালিকানাধীন আড়ত না সরালে গাবতলীতে কেউ যাবেন না।
কারওয়ান বাজার স্থানান্তর কমিটির সদস্য ও ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খান বলেন, কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ভবনে থাকা ১৭৬ জন ব্যবসায়ীই শুধু ভবনের ভেতর দোকান বরাদ্দ পাবেন। অস্থায়ী কাঁচাবাজারের ১৮০ জন ব্যবসায়ীকে বাজারের পূর্ব পাশে খালি জায়গায় দোকান দেওয়া হবে। বেশির ভাগ দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে দক্ষিণ পাশের ভবনে। ঈদের আগেই পাইকারি কাঁচাবাজারের জায়গা ফাঁকা করা হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটির সূত্র অনুযায়ী, কারওয়ান বাজার আড়ত ভবনে নিচতলায় ৪০০ বর্গফুটের ৬২টি ও দোতলায় ১৭০ বর্গফুটের ১১৪টি দোকান রয়েছে। আর আড়ত ভবনের দুই পাশে টিনের ছাউনির নিচে অস্থায়ী কাঁচাবাজারে ১৮০টি দোকান রয়েছে। ২০০ বর্গফুট আয়তনের এসব দোকান সম্পত্তি বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া।
কারওয়ান বাজারে যেসব ব্যবসায়ীর নিচতলায় দোকান ছিল, তাদের আমিনবাজারেও নিচতলায় দোকান দেওয়া হবে। আমিনবাজারে যেহেতু দোকানের আকার কমবেশি ১৩০ বর্গফুটের, সে জন্য একেকজন ব্যবসায়ী তিনটি দোকান বরাদ্দ পাবেন। আর কারওয়ান বাজারে দোতলার ১১৪ জন ব্যবসায়ীকে বেসমেন্টে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। দোতলার এই ব্যবসায়ীরা দুটি করে দোকান বরাদ্দ পাবেন। আর অস্থায়ী ১৮০টি দোকানের ব্যবসায়ীদের বসানো হবে কাঁচাবাজারের পেছনে খালি জায়গায়।