শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ০২:৩৮ পিএম
ষাট-সত্তর দশকের সময় একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন হাতেম আলী (৮৫)। নগরীর হোসেনীগঞ্জ এলাকায় বসবাস তার। দেশ স্বাধীনের আগে পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন। এরপর দেশ স্বাধীন হলে ঢাকা মোহামেডান, ঢাকা ওয়ান্ডার্স, ভিক্টোরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন ক্লাবে দারুণ ছন্দে খেলেছেন তিনি। ভাগ্য এমনই যে, এই খেলোয়াড় এখন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন।
জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে রাজশাহীর বরেন্দ্র যাদুঘর মোড়ে সেদ্ধ ডিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। ওই এলাকায় ‘দাদু’ নামেই পরিচিতি তার।
হাতেম আলী জানিয়েছেন, ১৫ মাস জেলে পার করেছেন। দেশে তসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলনের সময় জেল খাটতে হয়েছে তার। খেলাধুলা থেকে আয় করা সকল টাকা তখন শেষ হয়েছে। এরপর জীবন পরিচালনার জন্য গবাদিপশুর মাংস ও চামড়া বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা ভালোভাবে চললেও এরই মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা এক ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করে। ছেলেকে হারানোর শোকে সেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন এই ডিম বিক্রির ব্যবসা।
হাতেমের পাশে অধিকাংশ সময় তার স্ত্রী মমতাজ বেগম থাকেন। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা করে আয় হয় বলে জানান স্ত্রী মমতাজ। বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়েই এখন সংসার চলে। তবে এর আগে খেলোয়াড় ভাতা পেতেন কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেটাও বন্ধ হয়েছে।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তির সংগ্রামে সাড়া দিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর দেশের জন্য যুদ্ধও করেছন বলে দাবি করেন হাতেম আলী। বাকিরা মুক্তিযোদ্ধা কার্ড নিলেও তিনি কার্ড নেননি। ব্যক্তিগত জীবনে আটবার বিয়ে করেছেন। চারজন মানসিক রোগী, নির্যাতিতা ও দুস্থ নারীদের বিয়ে করে তাদের দায়িত্ব নেয়ার জন্য একাধিক বিয়ে করা বলে জানান তিনি। ৮ স্ত্রীর সংসারে তার ১২ ছেলে ও ৯ মেয়ে।
জীবন যুদ্ধের এই প্রান্তে হাতেম আলী আগে মুক্তিযোদ্ধা কার্ড না নিলেও এখন আক্ষেপ জানান। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও তার খেলোয়াড় ভাতা ফের চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন হাতেম আলী।
এসআর/এসএস