বুধবার, ১২ মে ২০২১ , ০৮:০২ পিএম
মৌসুমি আকতার এপি তালুকদার রাজধানী ঢাকায় শিক্ষকতা করেন। তার বাড়ি বগুড়ায়। করোনা পরিস্থিতির জন্য বর্তমানে সরাসরি পরিবহন বন্ধ থাকার জন্য অনেকের মতো তিনিও আটকা পড়েছিলেন ঢাকায়। কিন্তু নাড়ির টান ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অদম্য ইচ্ছায় সকল বাঁধা অতিক্রম করেছেন তিনি।
রাজধানী ঢাকা থেকে বাইসাইকেলযোগে গ্রামের বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারের রথবাড়ি এলাকায় পৌঁছেছেন। এপি তালুকদার গ্রামের মৃত আবদুল হাকিম তালুকদারের মেয়ে। তার এই অদম্য ইচ্ছায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশ এলাকার লোকজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীরা তার এই দুর্দান্ত সাহসিকতাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাকে দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করছেন মানুষজন।
২০১৮ সালে ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন এপি তালুকদার। বর্তমানে ঢাকার গোলাপবাগ থেকে বনানীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। এছাড়াও সে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের রেফারি, সাইক্লিস্ট, অ্যাথলেট ও ম্যারাথনিস্ট। বাইসাইকেল ছোটবেলায় চালানো শিখলেও ২০১৭ থেকে সে সাইক্লিস্ট।
করোনা পরিস্থিতির জন্য লকডাউন থাকায় ট্রেন ও দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় স্কুল থেকে ছুটি পেলেও বাড়ি যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এপি তালুকদার। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেন বাইসাইকেল দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবেন। তাই সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ৩ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় গোলাপবাগের বাসা থেকে বাইসাইকেলে গ্রামের বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেন। সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নেন।
মধ্যপথে বোনের সঙ্গে যোগ দেন ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগরের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মীর রাসেল। সে সিরাজগঞ্জ থেকে বোন এপি তালুকদারের সঙ্গে যোগ দেন। টাঙ্গাইলে যমুনা সেতুর পূর্ব পাড়ে আসার পর একটি কার্গোতে সেতু পাড়ি দেন। রাসেল সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ভুঁইয়াগাড়ি এলাকায় পৌঁছালে বাড়ি চলে যান। আর এপি তালুকদার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি গিয়ে পৌঁছান ৪ মে শেষ রাতে।
বুধবার (১২ মে) দুপুরে এপি তালুকদার জানান, গণপরিবহনে জনসমাগম করে বাড়ি ফিরতে হবে বলে বাইসাইকেল করে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেই। এ যাত্রা ছেলেদের জন্য সহজলভ্য হলেও মেয়েদের জন্য খুবই দূরহ। মহাসড়কে ছয় লেন হওয়ায় সাইকেল চালাতে কোনো কষ্ট হয়নি। যমুনা সেতুতে অনুমতি না থাকায় কার্গোতে করে পার হওয়ার কথাও জানান তিনি।
বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভার প্যানেল মেয়র সার্জিস আলম রতন জানিয়েছেন, এপি তালুকদার মেয়ে হয়েও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। রোজা রেখে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছেন। তার এ সাহসিকতা অন্য সকল নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
এসআর/