বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ০৫:৪৯ পিএম
কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাট ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বয়স্ক সিংহ ‘সোহেল’-এর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিংহের বেষ্টনিতে হঠাৎ নিথর হয়ে যায় সোহেল।
প্রজাতি অনুসারে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়া সিংহরাজ সোহেল ২২ বছরের মাথায় মারা গেছেন বলে দাবি করেছেন সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম। এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় তিনি চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বয়স্ক সিংহ ‘সোহেল’ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিংহের আবদ্ধ বেষ্টনিতে মারা যান। প্রকৃতিতে একটি সিংহ স্বাভাবিকভাবে বাঁচে ১৫ থেকে ১৮ বছর। কিন্তু ২০০৪ সালে ৪ বছর বয়ে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে আসার পর ২২ বছরের মাথায় বয়স্ক সিংহ ‘সোহেল’-এর মৃত্যু হয়েছে।
বিগত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিল সোহেল। চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুপন নন্দী ও পার্কের ভ্যাটেনারি সার্জন ডা. হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন মৃত সিংহ সোহেলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন।
পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহার আরও বলেন, ২০২১ সালের ২৫ জুলাই বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো একটা পত্রে লেখা হয় পার্কের পাঁচটি সিংহের মাঝে পুরুষ সিংহ ‘সোহেল’ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছে। সিংহটি ২০০৪ সালে ঢাকার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা হতে চার বছর বয়সে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক আনা হয়।
স্বভাবত একটি সিংহ প্রকৃতিতে ১৭ থেকে ২০ বছর বাঁচে। সিংহটি দীর্ঘদিন ধরে পার্কের সিংহের বিস্তারে (প্রজননে) ভূমিকা রেখে আসছেন। কিন্তু ২১ বছর পার হওয়া সিংহটি আয়ুষ্কালের শেষ সময়ে অবস্থান করছে। বয়সের বার্ধক্যের উল্লেখযোগ্য সব লক্ষ্মণ তার শরীরে ক্রমান্বয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক পৃথকভাবে তার চিকিৎসা করেন। তারাও অবজারভেশনে তার বার্ধক্য ও আয়ুষ্কাল শেষের দিকে এবং বার্ধক্যজনক সমস্যা প্রাণীকূলের স্বাভাবিক চিরাচরিত নিয়ম বলে উল্লেখ করেছেন। এ চিঠি দেওয়ার সাত মাসের মাথায় অন্য সঙ্গীদের ত্যাগ করে অবশেষে মারা গেছেন সোহেল।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকোরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় ১৯৯৯ সালে পথচলা শুরু ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের। ভেতর-বাইরে ৯০০ হেক্টর আয়তন নিয়ে যাত্রা করা পার্কে বিপুল পরিমাণ মাদার ট্রিসহ (গর্জন) রয়েছে নানান প্রজাতির বনজ গাছ। শুরু থেকেই সবুজের সমাহারে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের পার্কটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের সহায়ক হওয়ার পাশাপাশি আশপাশ এবং বিভিন্ন এলাকার মানুষের বিনোদনের অনুষঙ্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া বাকি ছয় দিন দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস মিশে যায় প্রাণীকূলের কোলাহলের সঙ্গে।
পার্কের ১৯টি বেষ্টনির মধ্যে সংরক্ষিত আছে বিচিত্র সব প্রাণী। পার্কের ভেতরে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তায় উন্মুক্ত ও আবদ্ধভাবে পালিত হচ্ছে হাতি, বাঘ, সিংহ, জলহস্তি, গয়াল, আফ্রিকান জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, ভাল্লুক, বন্য শুকর, হনুমান, ময়ূর, স্বাদু ও লোনা পানির কুমির, সাপ, বনগরুসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির প্রাণী।