শনিবার, ৩০ জুলাই ২০২২ , ০৯:০১ এএম
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা প্রাঙ্গণে রাখা ১১ মরদেহ। চোখের পানি মুছতে মুছতে ছেলের মরদেহ খুঁজছেন মোতাহার হোসেন খান। প্রতিটি ব্যাগ খুলে দেখতে থাকেন, একপর্যায়ে দেখা মিলে নিজ সন্তানের মরদেহের।
ছেলে মাসুদ রাকিব গতকাল শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে প্রাণ হারিয়েছেন মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায়। মাইক্রোবাসটি মীরসরাইয়ে রেললাইনে উঠে পড়লে ট্রেন সেটিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই মাসুদসহ ১১ জন নিহত হন। রেলওয়ে থানায় শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মরদেহগুলোর হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ছেলের মরদেহ নিতে এলে মোতাহার বলেন, ওর (রাকিবের) সঙ্গে রাতে (বৃহস্পতিবার) আমার কথা হয়। তখন বলে, বাবা আমি চলে যাব, আমার জন্য দোয়া করিয়েন। আমি দুপুরে টিভিতে দেখি অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। এরপর আমার হুঁশ হয়েছে, আমার ছেলে তো সেখানে। এখন আমার ছেলে আর নাই।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে প্রথম থেকে নানাবাড়িতে (আমানবাজার) লেখাপড়া করেছে। এসএসসি, এইচএসএসি দুটোতেই সে গোল্ডেন পেয়েছে। কলেজ পাসের পর বন্ধুবান্ধব নিয়ে ওখানেই একটা কোচিং সেন্টার করেছে। কোচিং সেন্টারে ৬০ থেকে ৭০ জন ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করাত। এসব বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেছেন তিনি। পরে ছেলের মরদেহ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেন নিহত রাকিবের বাবা।
রেলওয়ে থানায় প্রথম দফায় ৯ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের সদস্য না আসায় দুটি মরদেহ সেখানে রেখে দেওয়া হয়। সে দুটি শান্ত শীল ও আসিফ উদ্দিনের।
বন্ধু শান্তর মরদেহের পাশে বসে কাঁদতে দেখা যায় মো. তানভীরকে। অভিভাবক না আসায় তার কাছে পুলিশ মরদেহ দেয়নি।
তানভীর জানান, একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন তারা কুলগাঁও সিটি করপোরেশন স্কুলে। বেড়ে ওঠাও একসঙ্গে। কলেজে উঠে আলাদা হলেও বন্ধুত্বে কখনও ভাটা পড়েনি। মৃত্যু তাদের শেষ পর্যন্ত আলাদাই করেছে।
কাঁদতে কাঁদতে তানভীর বলেন, যাওয়ার আগে যদি একবার দেখা করত। শুধু একটাবার দেখা করত। সেই আফসোসে আমি মরে যাব। কেন এমন হলো বন্ধু? কী করব আমি?
ঘণ্টা দেড়েক পর শান্তর মা মিতা শীল গিয়ে ছেলের মরদেহ বুঝে নেন। এরপর বাকি থাকে আসিফ উদ্দিনের মরদেহ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিতে আসেন বাবা আবদুল আজিজ।