বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ০৮:০১ পিএম
দাফনের ৫ দিন পর উদ্ধার হওয়া ফরিদপুরের সদরপুরের নারী হাসি বেগম (২৪) স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছিলেন এবং বিয়েও করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ওই নারী আগের স্বামীর কাছে ফিরতে চান না। তাই বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে তাকে বাবার কাছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, আট বছর আগে ফরিদপুর সদরপুরের মোতালেব শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার হাসি বেগমের। তাদের ঘরে ৭ বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হন হাসি বেগম। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর হাসি বেগমকে হত্যা করে লাশ গুম করেছেন জামাতা মোতালেব শেখ সদরপুর থানায় এমন অভিযোগ দেন হাসি বেগমের বাবা শেখ হাবিবুর রহমান।
অপরদিকে শ্বশুরের অভিযোগের পর ১৪ সেপ্টেম্বর হাসির স্বামী মোতালেব শেখ সদরপুর থানায় পাল্টা অভিযোগ দেন। হাসি বেগম টাকাসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে বাবার বাড়িতে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগের এই ঘটনার মধ্যে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সদরপুর উপজেলা-সংলগ্ন ভাঙ্গা উপজেলার আদমপুর এলাকায় কচুরিপানার ভেতর থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
খবর পেয়ে হাসির বাবা শেখ হাবিবুর ও মা সালমা বেগম গিয়ে লাশটি তাদের মেয়ের নয় বলে জানান। তখন লাশটি নিয়ে যায় ভাঙ্গা থানার পুলিশ। কিন্তু পরদিন হাসির বাবা শেখ হাবিবুর ও ফুপু নিহারণ বেগম থানায় যান। পায়ের আঙুল ও গলায় তাবিজ থেকে লাশটি হাসির বলে শনাক্ত করেন।
ময়নাতদন্তের পর ২৩ সেপ্টেম্বর লাশটি হাসির বাবার হাতে তুলে দেন পুলিশ। ওই দিন সন্ধ্যায় সদরপুরের শৌলডুবী মদিনাতুল কবরস্থানে লাশের দাফন হয়।
এদিকে দাফনের খবর কোনোভাবে জানতে পারেন হাসি বেগম। তিনি মা-বাবাকে ফোন করে বলেন, ‘আমি বেঁচে আছি’। এই কথা হাসির বাবা পুলিশকে জানান। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে হাসি বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে সদরপুর থানার পুলিশ।
এ বিষয়ে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন আল রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, হাসি বেগমের বাবা জামাতার নামে যে মামলা করেছিলেন, হাসিকে উদ্ধারের পর সেটার প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
পুলিশকে হাসি বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে নান্দাইলে এক তরুণকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তার এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, তিনি বিবাহিত এবং স্বামীকে তালাক দেননি। তিনি স্বামী মোতালেবের কাছে ফিরে যেতে চান না।
এদিকে অর্ধগলিত যে লাশটি হাসি বেগমের হিসেবে শনাক্ত করে দাফন করা হয়, সে বিষয়ে ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করা হবে ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, হাসি বেগম জীবিত অবস্থায় ফিরে আসায় জানা গেল, দাফন করা লাশটি তার নয়। এ অবস্থায় একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে মৃতের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আশপাশের থানায় নিখোঁজ সংবাদের তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে চেষ্টা চলছে।