images

দেশজুড়ে

দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়ায় পাচার, যুদ্ধে বাংলাদেশি নিহত

আরিফুল হক সোহাগ

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ১০:০৮ পিএম

Failed to load the video

দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন শালা-দুলাভাই। একজন প্রাণ হারিয়েছেন, আরেকজন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার নন্দীগ্রামের রহমত আলী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আর নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ন কবির ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। তাদের জীবিত অথবা মৃত ফিরে পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে স্বজনরা।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার নন্দীগ্রামের রহমত আলী ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ুন কাজের খোঁজে বিদেশে যেতে চেয়েছিলেন। দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব হয়ে রাশিয়ায় যান তারা। কথা ছিল ভালো চাকরি পাবেন, কিন্তু পরে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইউক্রেনের যুদ্ধের ময়দানে।

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেন তারা। ড্রোন হামলায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান হুমায়ুন। গুরুতর আহত রহমত আলী এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। রহমত আলীর একটি কন্যাসন্তান তিন বছরের কন্যাসন্তান আর শ্যালক হুমায়ুনের এক বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

রহমত আলীর স্ত্রী যমুনা বেগম জানান, গত বছরের ১৮ অক্টোবর তার স্বামী এবং একমাত্র ছোট ভাই হুমায়ুন কবির বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন। তারা সৌদি আরব পৌঁছে সেখানে দালালের কথায় ওমরা হজ পালন শেষে ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ রাশিয়ায় পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছানোর পর সরাসরি সেনা ক্যাম্পের তাঁবুতে তাদের জায়গা হয়। সেখান থেকে ২২ দিনের ট্রেনিং শেষ করে সরাসরি ইউক্রেন এর বিপক্ষে যুদ্ধে নামিয়ে দেয়।

তিনি আরও জানান, তার স্বামীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দালাল তাদের বিক্রি করে দিছে রাশিয়ার কাছে। এখন প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আর তারা শ্যালক হুমায়ন কবির যুদ্ধের ময়দানে ড্রোন হামলায় তার সামনে নিহত হয়েছে। 

তিনি তার স্বামীকে ফিরে পেতে আর একমাত্র ভাইয়ের লাশ পরিবারে ফিরে পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। তিনি ড্রিম হোম ট্রাভেলস ও ট্যুরস লিমিটেডের দালাল হাসানসহ এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

অন্যদিকে নাটোরের হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী তারা খাতুন জানান, তার স্বামীকে তো তিনি আর জীবিত ফিরে পাবেন না, তাই তার লাশ শেষবারের মতো দেখতে পান সেটা চাওয়া সরকারের কাছে। আর দালাল চক্রের দ্রুত শাস্তি দাবি করেন তিনি।

এদিকে স্বজনদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তারা জানান, রহমত আলীর বৃদ্ধ মা-বাব রয়েছেন বাড়িতে। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে রহমত তৃতীয়। ২০০২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কুয়েতে প্রবাসী জীবন কাটিয়েছেন। করোনার ডামাডোলে আর তার প্রবাস যাওয়া হয়নি। হঠাৎ রহমতের শ্বশুরবাড়ির যেয়ে শালা দুলাভাই মিলে দালাল ধরে রাশিয়ায় যেয়ে এমন অবস্থা। যে দালাল এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তিসহ ক্ষতিপূরণ দাবি তাদের।

এদিকে নাটোর সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিহত পরিবারের মাঝে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য সচেতনতা তৈরির লক্ষে কাজ করবে প্রশাসন। হুমায়ুনের লাশ এবং আহত রহমতকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য প্রশাসন কাজ করছে। আর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন।

এদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু দেখে আশা বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ফয়সাল কবির শুভ জানিয়েছেন, বাংলাদেশিদের জন্য রাশিয়া বা ইউক্রেনের মতো দেশে ২০-২২ দিনে সার্ভাইভ করা অসম্ভব। এর জন্য আরও অনেক সময় প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেখানে বছরের বেশির ভাগ সময় মাইনাস ডিগ্রিতে থাকে।

তার দেখা শুধু বাংলাদেশি নয় অনেক ইন্ডিয়ান ও নেপালি বন্ধুরা রয়েছে, যারা রাশিয়ার হয়েও যুদ্ধ করছে আবার ইউক্রেন এর হয়েও যুদ্ধ করছে। কেননা, সে দেশগুলোতে নিয়ম করা হয়েছে ১৮ বছর বয়স হলে তাকে যুদ্ধে যেতে হবে এটা বাধ্যতামূলক। এরই সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু দালাল চক্র। তারা কাজের নাম করে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের বিক্রি করে দেয়। আর সাধারণ যারা প্রবাস জীবনযাপন করতে চান ভালোভাবে দেখে শুনে খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়াটা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

মৃত স্বজনের লাশ ফিরে পেতে আর জীবিত স্বজনকে বুকে টেনে নিতে অধীর আগ্রহে পথ চেয়ে বসে আছে পরিবার। তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন। 

আরটিভি/এএএ-টি