রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ০২:১৭ পিএম
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গাজীপুরসহ সারা দেশে চলছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। এরই মধ্যে গাজীপুর থেকে ৮৩ জনকে আটক করা হয়েছে যৌথ বাহিনীর বিশেষ এ অভিযানে। আটক সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী যাবের সাদেক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি), সেনাবাহিনী এবং র্যাব আটক করেছে তাদের।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু গাজীপুর মহানগর এলাকা থেকে ২৫ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
আটকদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের যুগ্ম-আহ্ব্য়য়ক মাসুদ মাহমুদ, টোক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম হোসেন (৩৬), কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য মো. শাহাদাত হোসেন (৩২), টোক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ রাজিব (২৫), টোক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (৬২), মো. মিলন মিয়া (৩৫), রায়েদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়সাল আহমেদ রুহুল (৪৩), টোক ইউনিয়ন ৫ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. বোরহান উদ্দিন (৫০), মো. শরীফ (২৭), শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মিলন আহম্মেদ, শ্রীপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি আহমেদ হোসেন মোল্লা, টোক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম হোসেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গাজীপুরের ঘটনায় অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। যারাই দেশকে অস্থিতিশীল করবে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এ গ্রেপ্তার হবে।
ডেভিল (শয়তান) যতদিন শেষ না হবে, ততদিন পর্যন্ত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হকের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে আহত হন অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের নেতাকর্মীরা বলেন, হামলায় আহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাইকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলায় আহতদের দেখতে গতকাল রাত তিনটার দিকে হাসপাতালটিতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দুই নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দাবি, গতকাল রাতে কাছে খবর আসে, ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। এটি শোনার পর প্রতিহত করতে শিক্ষার্থীরা রওনা হয়। দ্রুত ১৫ থেকে ২০ জন ঘটনাস্থলে চলে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটিতে লুটপাট হচ্ছে। এ সময় মাইকে ঘোষণা দিয়ে শত শত মানুষকে জড়ো করা হয়। অন্য শিক্ষার্থীরা আসার আগেই ওই শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে বাসার ছাদে নিয়ে পেটানো হয়। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও পেটায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মাহিম জানান, আ ক ম মোজাম্মেল হকের ধীরাশ্রমের বাড়িতে লুটপাট হচ্ছে, এমন খবরে লুটপাট ঠেকাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়। পরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও এলাকাবাসী তাদের ওপর হামলা চালায়।
আরটিভি/এসএইচএম